পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৫৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৪৮
মহাভারত

 ধৃতরাষ্ট্র হস্তিনাপুর থেকে নির্গত হয়েছেন শুনে যুধিষ্ঠিরাদি, কৃষ্ণ, সাত্যকি ও যুযুৎসু তাঁর অনুগমন করলেন। দ্রৌপদী ও পাঞ্চালবধূগণও সঙ্গে চললেন। পাণ্ডবগণ প্রণাম করলে ধৃতরাষ্ট্র অপ্রীতমনে যুধিষ্ঠিরকে আলিঙ্গন করলেন এবং ভীমকে খুঁজতে লাগলেন। অন্ধরাজের দুষ্ট অভিসন্ধি বুঝে কৃষ্ণ তাঁর হাত দিয়ে ভীমকে সরিয়ে দিলেন এবং ভীমের লৌহময় মূর্তি ধৃতরাষ্ট্রের সম্মুখে রাখলেন। অযুত হস্তীর ন্যায় বলবান ধৃতরাষ্ট্র সেই লৌহমূর্তি আলিঙ্গন ক’রে ভেঙে ফেললেন। বক্ষে চাপ লাগার ফলে তাঁর মুখ থেকে রক্তপাত হ’ল, তিনি ভূমিতে প’ড়ে গেলেন; তখন সঞ্জয় তাঁকে ধ’রে তুললেন। ধৃতরাষ্ট্র সরোদনে উচ্চস্বরে বললেন, হা হা ভীম!

 কৃষ্ণ বললেন, মহারাজ, শোক করবেন না, আপনি ভীমকে বধ করেন নি, তাঁর প্রতিমূর্তিই চূর্ণ করেছেন। দুর্যোধন ভীমের যে লৌহমূর্তি নির্মাণ করিয়েছিলেন তাই আমি আপনার সম্মুখে রেখেছিলাম। আপনার মন ধর্ম থেকে চ্যুত হয়েছে তাই আপনি ভীমসেনকে বধ করতে চান; কিন্তু তাঁকে মারলেও আপনার পুত্রেরা বেঁচে উঠবেন না। আপনি বেদ ও বিবিধ শাস্ত্র অধ্যয়ন করেছেন, পুরাণ ও রাজধর্মও শুনেছেন, তবে স্বয়ং অপরাধী হয়ে এরূপ ক্রোধ করেন কেন? আপনি আমাদের উপদেশ শোনেন নি, দুর্যোধনের বশে চ’লে বিপদে পড়েছেন।

 ধৃতরাষ্ট্র বললেন, মাধব, তোমার কথা সত্য, পুত্রস্নেহই আমাকে ধৈর্যচ্যুত করেছিল। আমার ক্রোধ এখন দূর হয়েছে, আমি মধ্যম পাণ্ডবকে স্পর্শ করতে ইচ্ছা করি। আমার পুত্রেরা নিহত হয়েছে, এখন পাণ্ডুর পুত্রেরাই আমার স্নেহের পাত্র। এই ব’লে ধৃতরাষ্ট্র ভীম প্রভৃতিকে আলিঙ্গন ও কুশলপ্রশ্ন করলেন।

৩। গান্ধারীর ক্রোধ

 তার পর পঞ্চপাণ্ডব গান্ধারীর কাছে গেলেন। পুত্রশোকার্তা গান্ধারী যুধিষ্ঠিরকে শাপ দিতে ইচ্ছা করেছেন জেনে দিব্যচক্ষুষ্মান মনোভাবজ্ঞ মহর্ষি ব্যাস তখনই উপস্থিত হলেন। তিনি তাঁর পুত্রবধূকে বললেন, গান্ধারী, তুমি পাণ্ডবদের উপর ক্রুদ্ধ হয়ো না। অষ্টাদশ দিন যুদ্ধের প্রতিদিনই দুর্যোধন তোমাকে বলত, মাতা, আমি শত্রুদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে যাচ্ছি, আমাকে আশীর্বাদ করুন। তুমি প্রতিদিনই পুত্রকে বলতে, যে পক্ষে ধর্ম সেই পক্ষেই জয় হবে। কল্যাণী, তুমি চিরদিন সত্য কথাই বলেছ। পাণ্ডববা অত্যন্ত সংশয়াপন্ন হয়ে পরিশেষে তুমুল