পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৫৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৫০
মহাভারত

কুৎসিত হয়ে গেল। অনন্তর কৃষ্ণের পশ্চাতে অর্জুনও গান্ধারীর কাছে এলেন। অবশেষে গান্ধারী ক্রোধমুক্ত হয়ে মাতার ন্যায় পাণ্ডবগণকে এবং কুন্তী ও দ্রৌপদীকে সান্ত্বনা দিলেন।


॥স্ত্রীবিলাপপর্বাধ্যায়॥

৪। গান্ধারীর কুরুক্ষেত্র দর্শন—কৃষ্ণকে অভিশাপ

 ব্যাসের আজ্ঞানুসারে ধৃতরাষ্ট্র ও যুধিষ্ঠিরাদি কৃষ্ণকে অগ্রবর্তী ক’রে কৌরবনারীদের নিয়ে কুরুক্ষেত্রে উপস্থিত হলেন। রুদ্রের ক্রীড়াস্থানের ন্যায় সেই যুদ্ধভূমি দেখে নারীরা উচ্চকণ্ঠে কাঁদতে কাঁদতে যান থেকে নামলেন।

 গান্ধারী দূর থেকেই দিব্যচক্ষু দ্বারা সেই ভীষণ রণভূমি দর্শন করলেন। তিনি কৃষ্ণকে বললেন, দেখ, একাদশ অক্ষৌহিণীর অধিপতি দুর্যোধন গদা আলিঙ্গন ক’রে রক্তাক্তদেহে শুয়ে আছেন। আমার পুত্রের মৃত্যু অপেক্ষাও কষ্টকর এই, যে নারীরা নিহত পতিগণের পরিচর্যা করছেন। লক্ষ্মণজননী দুর্যোধনপত্নী মস্তকে করাঘাত ক’রে পতির বক্ষে পতিত হয়েছেন। আমার প্রতিপুত্রহীনা পুত্রবধূরা আলালায়িতকেশে রণভূমিতে ধাবিত হচ্ছেন। মস্তকহীন দেহ এবং দেহহীন মস্তক দেখে অনেকে মূর্ছিত হয়ে প’ড়ে গেছেন। ওই দেখ, আমার পুত্র বিকর্ণের তরুণী পত্নী মাংসলোভী গৃধ্রদের তাড়াবার চেষ্টা করছেন, কিন্তু পারছেন না। কৃষ্ণ, তুমি নারীদের দারুণ ক্রন্দনের নিনাদ শোন। শ্বাপদগণ আমার পুত্র দুর্মুখের মুখমণ্ডলের অর্ধভাগ ভক্ষণ করেছে। কেশব, লোকে যাঁকে অর্জুন বা তোমার চেয়ে দেড়গুণ অধিক শৌর্যশালী বলত সেই অভিমন্যুও নিহত হয়েছেন, বিরাটদুহিতা বালিকা উত্তরা শোকে আকুল হয়ে পতির গায়ে হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। উত্তরা বিলাপ ক’রে বলছেন, বীর, তুমি আমাদের মিলনের ছ মাস পরেই নিহত হ’লে! ওই দেখ, মৎস্যরাজের কুলস্ত্রীগণ অভাগিনী উত্তরাকে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। হায়, কর্ণের পত্নী জ্ঞানশূন্য হয়ে ভূতলে প’ড়ে গেছেন, শ্বাপদগণ কর্ণের দেহের অল্পই অবশিষ্ট রেখেছে। গৃধ্র ও শৃগালগণ সিন্ধুসৌবীররাজ জয়দ্রথের দেহ ভক্ষণ করছে, আমার কন্যা দুঃশলা আত্মহত্যার চেষ্টা করছে এবং পাণ্ডবদের গালি দিচ্ছে। হা হা, ওই দেখ, দুঃশলা তার পতির মস্তক না পেয়ে চারিদিকে ছুটে বেড়াচ্ছে। ওখানে ঊর্দ্ধরেতা সত্যপ্রতিজ্ঞ ভীষ্ম শরশয্যায় শুয়ে আছেন। দ্রোণপত্নী কৃপী শোকে বিহ্বল হয়ে পতির সেবা