পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৫৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
স্ত্রীপৰ্ব
৫৫১

করছেন, জটাধারী ব্রাহ্মণগণ দ্রোণের চিতা নির্মাণ করছেন। কৃষ্ণ, ওই দেখ, শকুনিকে শকুনগণ বেষ্টন ক’রে আছে, এই দুর্বুদ্ধিও অস্ত্রাঘাতে নিধনের ফলে স্বর্গে যাবেন!

 তার পর গান্ধারী বললেন, মধুসূদন, তুমি কেন এই যুদ্ধ হ’তে দিলে? তোমার সামর্থ্য ও বিপুল সৈন্য আছে, উভয় পক্ষই তোমার কথা শুনত, তথাপি তুমি কুরুকুলের এই বিনাশ উপেক্ষা করেছ, তোমাকে এর ফল ভোগ করতে হবে। পতির শুশ্রূষা ক’রে আমি যে তপোবল অর্জন করেছি তার দ্বারা তোমাকে অভিশাপ দিচ্ছি — তুমি যখন কুরু-পাণ্ডব জ্ঞাতিদের বিনাশ উপেক্ষা করেছ, তখন তোমার জ্ঞাতিগণকেও তুমি বিনষ্ট করবে। ছত্রিশ বৎসর পরে তুমি জ্ঞাতিহীন অমাত্যহীন পুত্রহীন ও বনচারী হয়ে অপকৃষ্ট উপায়ে নিহত হবে। আজ যেমন ভরতবংশের নারীরা ভূমিতে লণ্ঠিত হচ্ছে, তোমাদের নারীরাও সেইরূপ হবে।

 মহামনা বাসুদেব ঈষৎ হাস্য করে বললেন, দেবী, আপনি যা বললেন তা আমি জানি; যা অবশ্যম্ভাবী তার জন্যই আপনি অভিশাপ দিলেন। বৃষ্ণিবংশের সংহারকর্তা আমি ভিন্ন আর কেউ নেই। যাদবগণ মানুষ ও দেবদানবের অবধ্য, তাঁরা পরস্পরের হস্তে নিহত হবেন। কৃষ্ণের এই উক্তি শুনে পাণ্ডবগণ উদ্‌বিগ্ন ও জীবন সম্বন্ধে নিরাশ হলেন।


॥ শ্রাদ্ধপর্বাধ্যায়॥

৫। মৃতসৎকার—কর্ণের জন্মরহস্যপ্রকাশ

 যুধিষ্ঠিরের আদেশে ধৌম্য বিদুর সঞ্জয় ইন্দ্রসেন প্রভৃতি চন্দন অগুরুকাষ্ঠ ঘৃত তৈল গন্ধদ্রব্য ক্ষৌমবসন কাষ্ঠ ভগ্নরথ ও বিবিধ অস্ত্র সংগ্রহ ক’রে সযত্নে বহু চিতা নির্মাণ করলেন এবং প্রজ্বলিত অগ্নিতে নিহত আত্মীয়বৃন্দ ও অন্যান্য শতসহস্র বীরগণের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পাদন করলেন। তার পর ধৃতরাষ্ট্রকে অগ্রবর্তী করে যুধিষ্ঠিরাদি গঙ্গার তীরে গেলেন এবং ভূষণ উত্তরীয় ও উষ্ণীষ খুলে ফেলে বীরপত্নীগণের সহিত তর্পণ করলেন।

 সহসা শোকাকুল হয়ে কুন্তী তাঁর পুত্রগণকে বললেন, অর্জুন যাঁকে বধ করেছেন, তোমরা যাঁকে সূতপুত্র এবং রাধার গভর্জাত মনে করতে, সেই মহাধনুর্ধর বীরলক্ষণান্বিত কর্ণের উদ্দেশেও তোমরা তর্পণ কর। তিনি তোমাদের জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা, সূর্যের ঔরসে আমার গর্ভে কবচকুণ্ডলধারী হয়ে জন্মেছিলেন।