পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আদিপর্ব
৩১

করেছিলেন। আপনাকে প্রণাম করছি, এঁর হস্তে আমাকে সম্প্রদান করুন, আমি অন্য পতি বরণ করব না।

 শুক্র বললেন, প্রণয় ধর্মের অপেক্ষা রাখে না তাই তুমি যযাতিকে বরণ করেছ। কচের শাপে তোমার স্ববর্ণে বিবাহও হতে পারে না। যযাতি, তোমাকে এই কন্যা দিলাম, এঁকে তোমার মহিষী কর। আমার বরে তোমার বর্ণসংকরজনিত পাপ হবে না। বৃষপর্বার কন্যা এই কুমারী শর্মিষ্ঠাকে তুমি সসম্মানে রেখো, কিন্তু এঁকে শয্যায় ডেকো না।


 দেবযানী শর্মিষ্ঠা আর দাসীদের নিয়ে যযাতি তাঁর রাজধানীতে গেলেন। দেবযানীর অনুমতি নিয়ে তিনি অশোক বনের নিকট শর্মিষ্ঠার জন্য পৃথক গৃহ নির্মাণ করিয়ে দিলেন এবং তাঁর অন্নবস্ত্রাদির উপযুক্ত ব্যবস্থা করলেন। সহস্র দাসীও শর্মিষ্ঠার কাছে রইল।

 কিছুকাল পরে দেবযানীর একটি পুত্র হ’ল। শর্মিষ্ঠা ভাবলেন আমার পতি নেই, বৃথা যৌবনবতী হয়েছি; আমিও দেবযানীর ন্যায় নিজেই পতি বরণ করব। একদা যযাতি বেড়াতে বেড়াতে অশোক বনে এসে পড়লেন। শর্মিষ্ঠা তাঁকে সংবর্ধনা করে কৃতাঞ্জলি হয়ে বললেন, মহারাজ, আমার রূপ কুল শীল আপনি জানেন, আমি প্রার্থনা করছি আমার ঋতুরক্ষা করুন। যযাতি বললেন, তুমি সর্ব বিষয়ে অনিন্দিতা তা আমি জানি, কিন্তু তোমাকে শয্যায় আহহ্বান করতে শুক্রাচার্যের নিষেধ আছে। শর্মিষ্ঠা বললেন,

ন নর্মযুক্তং বচনং হিনস্তি
ন স্ত্রীষু রাজন্ ন বিবাহকালে।
প্রাণাত্যয়ে সর্বধনাপহারে
পঞ্চানৃতান্যাহুরপাতকানি॥

—মহারাজ, পরিহাসে, স্ত্রীলোকের মনোরঞ্জনে, বিবাহকালে, প্রাণসংশয়ে এবং সর্বস্ব নাশের সম্ভাবনায়, এই পাঁচ অবস্থায় মিথ্যা বললে পাপ হয় না।[১]

 যযাতি বললেন, আমি রাজা হয়ে যদি মিথ্যাচরণ করি তবে প্রজারাও আমার অনুসরণ ক’রে মিথ্যাকথনের পাপে বিনষ্ট হবে। শর্মিষ্ঠা বললেন, যিনি সখীর পতি তিনি নিজের পতির তুলা, দেবযানীকে বিবাহ ক’রে আপনি আমারও পতি হয়েছেন।


  1. কর্ণপর্ব ১৬-পরিচ্ছেদে অনুরূপ শ্লোক আছে।