পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৫৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

শান্তিপর্ব

॥ রাজধর্মানুশাসনপর্বাধ্যায়॥

১। যুধিষ্ঠির-সকাশে নারদাদি

 মৃতজনের তর্পণের পর পাণ্ডবগণ অশৌচমোচনের জন্য গঙ্গাতীরে এক মাস বাস করলেন। সেই সময়ে ব্যাস নারদ দেবল প্রভৃতি মহর্ষিগণ এবং বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণ, স্নাতক ও গৃহস্থগণ তাঁদের সঙ্গে দেখা ক’রে কুশলজিজ্ঞাসা করলেন। যুধিষ্ঠির বললেন, আমি ব্রাহ্মণদের অনুগ্রহে এবং কৃষ্ণ ও ভীমার্জুনের শৌর্যে পৃথিবী জয় করেছি, কিন্তু জ্ঞাতিক্ষয় এবং পুত্রদের নিধনের পর আমার এই জয়লাভ পরাজয়ের তুল্য মনে হচ্ছে। আমরা জানতাম না যে কর্ণ আমাদের ভ্রাতা, কিন্তু কর্ণ তা জানতেন, কারণ আমাদের মাতা তাঁকে বলেছিলেন। তথাপি তিনি কৃতজ্ঞতা ও প্রতিশ্রুতিরক্ষার জন্য দুর্যোধনকে ত্যাগ করেন নি। আমাদের সেই সহোদর ভ্রাতা অর্জুন কর্তৃক নিহত হয়েছেন। দুর্যোধনের হিতৈষী কর্ণ যখন দ্যূতসভায় আমাদের কটুবাক্য বলেছিলেন তখন তাঁর চরণের সঙ্গে আমাদের জননীর চরণের সাদৃশ্য দেখে আমার ক্রোধ দূর হয়েছিল, কিন্তু সাদৃশ্যের কারণ তখন বুঝতে পারি নি।

 দেবর্ষি নারদ কর্ণের জন্ম ও অস্ত্রশিক্ষার ইতিহাস বিকৃত করে বললেন, কর্ণের বাহুবলের সাহায্যেই দুর্যোধন কলিঙ্গরাজ চিত্রাঙ্গদের কন্যাকে স্বয়ংবরসভা থেকে হরণ করেছিলেন। তার পব কর্ণ মগধরাজ জরাসন্ধকে দ্বৈরথযুদ্ধে পরাজিত করলে জরাসন্ধ প্রীত হয়ে তাঁকে অঙ্গদেশের মালিনী নগরী দান করেন। দুর্যোধনের কাছ থেকে তিনি চম্পা নগরী পালনের ভার পেয়েছিলেন। পরশুরাম ও একজন ব্রাহ্মণ তাঁকে অভিশাপ দিয়েছিলেন, ইন্দ্র তাঁর কবচকুণ্ডল হরণ করেছিলেন, ভীষ্ম অপমানিত হয়ে তাঁকে অর্ধরথ বলেছিলেন, শল্য তাঁর তেজোহানি করেছিলেন। এইসকল কারণে এবং বাসুদেবের কূটনীতির ফলে কর্ণ যুদ্ধে নিহত হয়েছেন, তাঁর জন্য শোক করা অনুচিত।

 কুন্তী কাতর হয়ে বললেন, যুধিষ্ঠির, আমি কর্ণের কাছে প্রার্থনা করেছিলাম, তাঁর জনক দিবাকরও স্বপ্নযোগে তাঁকে অনুরোধ করেছিলেন, তথাপি