পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৫৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৫৪
মহাভারত

আমরা তোমার সঙ্গে কর্ণের মিলন ঘটাতে পারি নি। যুধিষ্ঠির বললেন, কর্ণের পরিচয় গোপন ক’রে আপনি আমাকে কষ্ট দিয়েছেন। মহাতেজা যুধিষ্ঠির দুঃখিতমনে অভিশাপ দিলেন — স্ত্রীজাতি কিছুই গোপন করতে পারবে না।

২। যুধিষ্ঠিরের মনস্তাপ

 শোকসন্তপ্ত যুধিষ্ঠির অর্জুনকে বললেন, ক্ষত্রিয়াচার পৌরুষ ও ক্রোধকে ধিক, যার ফলে আমাদের এই বিপদ হয়েছে। আমাদের জয় হয় নি, দুর্যোধনেরও জয় হয় নি; তাঁকে বধ ক’রে আমাদের ক্রোধ দূর হয়েছে, কিন্তু আমি শোকে বিদীর্ণ হচ্ছি। ধনঞ্জয়, আমার রাজ্যে প্রয়োজন নেই, তুমিই রাজ্যশাসন কর; আমি নির্দ্বন্দ্ব নির্মম হয়ে তত্ত্বজ্ঞান লাভের জন্য বনে যাব, চীর ও জটা ধারণ ক’রে তপস্যা করব, ভিক্ষান্নে জীবিকানির্বাহ করব। বহু কাল পরে আমার প্রজ্ঞার উদয় হয়েছে, এখন আমি অব্যয় শাশ্বত স্থান লাভ করতে ইচ্ছা করি।

 অর্জুন অসহিষ্ণু হয়ে ঈষৎ হাস্য ক’রে বললেন, আপনি অমানুষিক কর্ম সম্পন্ন ক’রে এখন শ্রেষ্ঠ সম্পদ ত্যাগ করতে চান! যে ক্লীব বা দীর্ঘসূত্রী তার রাজ্যভোগ কি ক’রে হবে? আপনি রাজকুলে জন্মেছেন, সমগ্র বসুন্ধরা জয় করেছেন, এখন মূঢ়তার বশে ধর্ম ও অর্থ ত্যাগ ক’রে বনে যেতে চাচ্ছেন! মহারাজ, অর্থ থেকেই ধর্ম কাম ও স্বর্গ হয়, অর্থ না থাকলে লোকের প্রাণযাত্রাও অসম্ভব হয়। দেবগণও তাঁদের জ্ঞাতি অসুরগণকে বধ ক’রে সমৃদ্ধি লাভ করেছিলেন। রাজা যদি অন্যের ধন হরণ না করেন তবে কি ক’রে ধর্মকার্য করবেন? এখন সর্বদক্ষিণাযুক্ত যজ্ঞ করাই আপনার কর্তব্য, নতুবা আপনার পাপ হবে। মহারাজ, আপনি কুপথে যাবেন না।

 ভীম বললেন, মহারাজ, আপনি মন্দবুদ্ধি বেদপাঠক ব্রাহ্মণের ন্যায় কথা বলছেন। আপনি আলস্যে দিনযাপন করতে চান তাই রাজধর্মকে অবজ্ঞা করছেন। আপনার এমন বুদ্ধি হবে জানলে আমরা যুদ্ধ করতাম না। আমাদেরই দোষ, বলশালী কৃতবিদ্য ও মনস্বী হয়েও আমরা একজন ক্লীবের বশে চলেছি। বনে গিয়ে মৌনব্রত ও কপট ধর্ম অবলম্বন করলে আপনার মৃত্যুই হবে, জীবিকানির্বাহ হবে না।

 নকুল-সহদেবও যুধিষ্ঠিরকে নানাপ্রকারে বোঝাবার চেষ্টা করলেন। তার পর দ্রৌপদী বললেন, মহারাজ, তোমার ভ্রাতারা চাতক পক্ষীর ন্যায় শুষ্ককণ্ঠে অনেক কথা বললেন, কিন্তু তুমি উত্তর দিয়ে এঁদের আনন্দিত করছ না। এঁরা