পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৫৮৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৫৬
মহাভারত

করা উচিত নয়। ব্যাসদেব বললেন, যুধিষ্ঠির, তুমি ক্ষত্রিয়ধর্ম অনুসারেই ক্ষত্রিয়দের বিনষ্ট করেছ। যে লোক জেনে শুনে পাপকর্ম করে এবং তার পর নিলর্জ্জ থাকে তাকেই পূর্ণ পাপী বলা হয়; এমন পাপের প্রায়শ্চিত্ত নেই। কিন্তু তুমি শুদ্ধস্বভাব, যা করেছ তা দুর্যোধনাদির দোষে অনিচ্ছায় করেছ এবং অনুতপ্তও হয়েছ। এরূপ পাপের প্রায়শ্চিত্ত মহাযজ্ঞ অশ্বমেধ; তুমি সেই যজ্ঞ করে পাপমুক্ত হও।

 তার পর ব্যাসদেব নানাপ্রকার পাপকর্ম এবং সে সকলের উপযুক্ত প্রায়শ্চিত্ত বিবৃত করলেন। যুধিষ্ঠির বললেন, ভগবান, আমি রাজধর্ম, চতুর্বর্ণের ধর্ম, আপৎকালোচিত ধর্ম প্রভৃতি সবিস্তারে শুনতে ইচ্ছা করি। ব্যাস বললেন, তুমি যদি সর্বপ্রকার ধর্ম জানতে চাও তবে কুরুপিতামহ ভীষ্মের কাছে যাও, তিনি তোমার সমস্ত সংশয় ছেদন করবেন। যুধিষ্ঠির বললেন, আমি জ্ঞাতিসংহার করেছি, ছল ক’রে ভীষ্মকে নিপাতিত করেছি, এখন কোন্ মুখে তাঁর কাছে গিয়ে ধর্মজিজ্ঞাসা করব?

 কৃষ্ণ বললেন, নৃপশ্রেষ্ঠ, ভগবান ব্যাস যা বললেন তাই আপনি করুন। গ্রীষ্মকালের অন্তে লোকে যেমন মেঘের উপাসনা করে সেইরূপ আপনার প্রজারা, হতাবশিষ্ট রাজারা এবং কুরুজাঙ্গলবাসী ব্রাহ্মণাদি চতুবর্ণের প্রজারা প্রার্থী রূপে আপনার কাছে সমবেত হয়েছেন। আপনি আমাদের সকলের প্রীতির নিমিত্ত লোকহিতে নিযুক্ত হ’ন।

 কৃষ্ণ, ব্যাস, দেবস্থান, ভ্রাতৃগণ, এবং অন্যান্য বহু লোকের অনুনয় শুনে মহাযশা যুধিষ্ঠিরের মনস্তাপ দূর হ’ল, তিনি শান্তিলাভ ক’রে নিজের কর্তব্যে অবহিত হলেন। তার পর ধৃতরাষ্ট্রকে পুরোবর্তী ক’রে এবং সুহৃদ্‌গণে পরিবেষ্টিত হয়ে ধর্মরাজ যুধিষ্ঠির সমারোহ সহকারে হস্তিনাপুরে প্রবেশ করলেন।

৩। চার্বাকবধ—যুধিষ্ঠিরের অভিষেক

 রাজভবনে প্রবেশ করে যুধিষ্ঠির দেবতা ও সমবেত ব্রাহ্মণগণের যথাবিধি অর্চনা করলেন। দুর্যোধনের সখা চার্বাক রাক্ষস ভিক্ষুর ছদ্মবেশে শিখা দণ্ড ও জপমালা ধারণ ক’রে সেখানে উপস্থিত ছিল। ব্রাহ্মণদের অনুমতি না নিয়েই সে যুধিষ্ঠিরকে বললে, কুন্তীপত্র, এই দ্বিজগণ আমার মুখে তোমাকে বলছেন — তুমি জ্ঞাতিহতা কুনৃপতি, তোমাকে ধিক। জ্ঞাতি ও গুরুজনদের হত্যা ক’রে