পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৫৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শান্তিপর্ব
৫৫৭

তোমার রাজ্যে কি প্রয়োজন? মৃত্যুই তোমার পক্ষে শ্রেয়। যুধিষ্ঠির ব্যাকুল হয়ে বললেন, বিপ্রগণ, আমি প্রণত হয়ে বলছি, আপনারা প্রসন্ন হ’ন; আমার মরণ আসন্ন, আপনারা ধিক্কার দেবেন না।

 ব্রাহ্মণগণ জ্ঞানচক্ষু দ্বারা চার্বাককে চিনতে পেরে বললেন, ধর্মরাজ, এ দুর্যোধনসখা চার্বাক রাক্ষস। আমরা আপনার নিন্দা করি নি, আপনার ভয় দূর হ’ক। তার পর সেই ব্রহ্মবাদী বিপ্রগণ ক্রোধে অধীর হয়ে হুংকার করলেন, চার্বাক দগ্ধ হয়ে ভূপতিত হ’ল।

 কৃষ্ণ বললেন, মহারাজ, পুরাকালে সত্যযুগে এই চার্বাক রাক্ষস বদরিকাশ্রমে তপস্যা ক’রে ব্রহ্মার নিকট অভয়বর লাভ করেছিল। বর পেয়ে পাপী রাক্ষস দেবগণের উপর উৎপীড়ন করতে লাগল। দেবগণ শরণাপন্ন হ’লে ব্রহ্মা বললেন, ভবিষ্যতে এই রাক্ষস দুর্যোধন নামক এক রাজার সখা হবে এবং ব্রাহ্মণগণের অপমান করবে; তখন বিপ্রগণ রুষ্ট হয়ে পাপী চার্বাককে দগ্ধ করবেন। ভরতশ্রেষ্ঠ, সেই পাপী চার্বাকই এখন ব্রহ্মতেজে বিনষ্ট হয়েছে। আপনার জ্ঞাতি ক্ষত্রিয়বীরগণ নিহত হয়ে স্বর্গে গেছেন, আপনি শোক ও গ্লানি থেকে মুক্ত হয়ে এখন কর্তব্য পালন করুন।

 তার পর যুধিষ্ঠির হৃষ্টচিত্তে স্বর্ণময় পীঠে পূর্বমুখ হয়ে বসলেন। কৃষ্ণ ও সাত্যকি তাঁর সম্মুখে এবং ভীম ও অর্জুন দুই পার্শ্বে উপবিষ্ট হলেন। নকুল-সহদেবের সহিত কুন্তী এক স্বর্ণভূষিত গজদন্তের আসনে বসলেন। গান্ধারী যুযুৎসু ও সঞ্জয় ধৃতরাষ্ট্রের নিকটে আসন গ্রহণ করলেন। প্রজাবর্গ নানাপ্রকার মাঙ্গলিক দ্রব্য নিয়ে ধর্মরাজকে দর্শন করতে এল। কৃষ্ণের অনুমতিক্রমে পুরোহিত ধৌম্য একটি বেদীর উপর ব্যাঘ্রচর্মাবত সর্বতোভদ্র নামক আসনে মহাত্মা যুধিষ্ঠির ও দ্রুপদনন্দিনী কৃষ্ণাকে বসিয়ে যথাবিধি হোম করলেন। কৃষ্ণ পাঞ্চজন্য শঙ্খ থেকে জল ঢেলে যুধিষ্ঠিরকে অভিষিক্ত করলেন, প্রজাবৃন্দসহ ধৃতরাষ্ট্রও জলসেক করলেন। পণব আনক ও দুন্দুভি বাজতে লাগল। যুধিষ্ঠির ব্রাহ্মণদের প্রচুর দক্ষিণা দিলেন, তাঁরা আনন্দিত হয়ে স্বস্তি ও জয় উচ্চারণ ক’রে রাজার প্রশংসা করতে লাগলেন।

 যুধিষ্ঠির বললেন, আমরা ধন্য, কারণ, সত্য বা মিথ্যা যাই হ’ক, ব্রাহ্মণশ্রেষ্ঠগণ পাণ্ডবদের গুণকীর্তন করছেন। মহারাজ ধৃতরাষ্ট্র আমাদের পিতা এবং পরমদেবতা, আমি এঁর সেবা করব সেজন্য জ্ঞাতিহত্যার পরেও প্রাণধারণ ক’রে আছি। সুহৃদ্‌গণ, যদি আমার উপর তোমাদের অনুগ্রহ থাকে তবে তোমরা