পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৫৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৬২
মহাভারত

৬। বেণ ও পৃথু রাজার কথা

 পরদিন যুধিষ্ঠিরাদি পুনর্বার ভীষ্মের কাছে উপস্থিত হলেন। ব্যাস প্রভৃতি ঋষি ও ভীষ্মকে অভিবাদনের পর যুধিষ্ঠির প্রশ্ন করলেন, পিতামহ, ‘রাজা’ শব্দের উৎপত্তি কি ক’রে হ’ল তা বলুন। রাজা কি প্রকারে পৃথিবী রক্ষা করেন? লোকে কেন তাঁর অনুগ্রহ চায়?

 ভীষ্ম বললেন, নরশ্রেষ্ঠ, সত্যযুগের প্রথমে যেভাবে রাজপদের উৎপত্তি হয় তা বলছি শোন। পুরাকালে রাজা ছিল না, রাজ্য ও দণ্ডও ছিল না, দণ্ডার্হ লোকও ছিল না, প্রজারা ধর্মানুসারে পরস্পরকে রক্ষা করত। ক্রমশ মোহের বশে লোকের ধর্মজ্ঞান নষ্ট হ’ল, বেদও লুপ্ত হ’ল, তখন দেবতারা ব্রহ্মার শরণ নিলেন। ব্রহ্মা এক লক্ষ অধ্যায়যুক্ত একটি নীতিশাস্ত্র রচনা ক’রে তাতে ধর্ম-অর্থ-কাম এই ত্রিবর্গ এবং মোক্ষবিষয়ক চতুর্থ বর্গ বিবৃত করলেন। এই শাস্ত্রে তিন বেদ, আন্বীক্ষিকী (তর্ক বিদ্যা), বার্তা (কৃষিবাণিজ্যাদি বৃত্তি), দণ্ডনীতি, সাম দান দণ্ড ভেদ উপেক্ষা এই পঞ্চ উপায়, সন্ধিবিগ্রহাদি, যুদ্ধ, দুর্গ, বিচারালয়ের কার্য, এবং আরও অনেক বিষয় বর্ণিত হয়েছে। মানুষ অল্পায়ু, এই বুঝে মহাদেব সেই নীতিশাস্ত্রকে সংক্ষিপ্ত করলেন, তার পর ইন্দ্র বৃহস্পতি ও যোগাচার্য শুত্রু ক্রমশ আরও সংক্ষিপ্ত করলেন।

 দেবগণ প্রজাপতি বিষ্ণুর কাছে গিয়ে বললেন, মানুষের মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ হবার যোগ্য তা বলুন। বিষ্ণু বিরজা নামে এক মানসপুত্র সৃষ্টি করলেন। বিরজার অধস্তন পুরুষ যথাক্রমে কীর্তিমান কর্দম অনঙ্গ নীতিমান (বা অতিবল) ও বেণ। বেণ অধার্মিক ও প্রজাপীড়ক ছিলেন, সেজন্য ঋষিগণ মন্ত্রপূত কুশ দিয়ে তাঁকে বধ করলেন। তার পর তাঁরা বেণের দক্ষিণ ঊরু মন্থন করলেন, তা থেকে এক খর্বদেহ কদাকার দগ্ধকাষ্ঠতুল্য পুরুষ উৎপন্ন হ’ল। ঋষিরা তাকে বললেন, ‘নিষীদ’ — উপবেশন কর। এই পুরুষ থেকে বনপর্বতবাসী নিষাদ ও ম্লেচ্ছ সকল উৎপন্ন হ’ল। তার পর ঋষিরা বেণের দক্ষিণ হস্ত মথন করলেন, তা থেকে ইন্দ্রের ন্যায় রূপবান একটি পুরুষ উৎপন্ন হলেন। ইনি ধনুর্বাণধারী, বেদ-বেদাঙ্গ-ধনুর্বেদে পারদর্শী এবং দণ্ডনীতিজ্ঞ। দেবতা ও মহর্ষিগণ এই বেণপুত্রকে বললেন, তুমি নিজের প্রিয়-অপ্রিয় এবং কাম ক্রোধ লোভ মান ত্যাগ ক’রে সর্বজীবের প্রতি সমদর্শী হবে এবং ধর্মভ্রষ্ট মানুষকে দণ্ড দেবে; তুমি প্রতিজ্ঞা কর যে কায়মনোবাক্যে বেদনির্দিষ্ট ও দণ্ডনীতিসম্মত ধর্ম পালন করবে, দ্বিজগণকে দণ্ড দেবে না এবং