পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩২
মহাভারত

পুত্রহীনার পাপ থেকে আমাকে রক্ষা করুন, আপনার প্রসাদে পুত্রবতী হয়ে আমি ধর্মাচরণ করতে চাই। তখন যযাতি শর্মিষ্ঠার প্রার্থনা পূরণ করলেন।

১৩। যযাতির জরা

 শর্মিষ্ঠার দেবকুমারতুল্য একটি পুত্র হ’ল। দেবযানী তাঁকে বললেন, তুমি কামের বশে এ কি পাপ করলে? শর্মিষ্ঠা বললেন, একজন ধর্মাত্মা বেদজ্ঞ ঋষি আমার কাছে এসেছিলেন, তাঁরই বরে আমার পুত্র হয়েছে, আমি অন্যায় কিছ করি নি। দেবযানী প্রশ্ন করলেন, সেই ব্রাহ্মণের নাম গোত্র বংশ কি? শর্মিষ্ঠা বললেন, তিনি তপস্যার তেজে সূর্যের ন্যায় দীপ্তিমান, তাঁর পরিচয় জিজ্ঞাসা করবার শক্তি আমার ছিল না। দেবযানী বললেন, তুমি যদি বর্ণজ্যেষ্ঠ ব্রাহ্মণ থেকেই অপত্যলাভ ক’রে থাক তবে আর আমার ক্রোধ নেই।

 কালক্রমে যদু ও তুর্বসু নামে দেবযানীর দুই পুত্র এবং দ্রুহ্যু অনু ও পুরু নামে শর্মিষ্ঠার তিন পুত্র হ’ল। একদিন দেবযানী যযাতির সঙ্গে উপবনে বেড়াতে বেড়াতে দেখলেন, দেবকুমারতুল্য কয়েকটি বালক নির্ভয়ে খেলা করছে। তিনি তাদের জিজ্ঞাসা করলেন, বৎসগণ, তোমাদের নাম কি, বংশ কি, পিতা কে? বালকরা যযাতি আর শর্মিষ্ঠার দিকে আঙুল বাড়িয়ে বললে, এই আমাদের পিতা মাতা। এই বলে তারা রাজার কাছে এল, কিন্তু দেবযানী সঙ্গে থাকায় রাজা তাদের আদর করলেন না, তারা কাঁদতে কাঁদতে শর্মিষ্ঠার কাছে এল। দেবযানী শর্মিষ্ঠাকে বললেন, তুমি আমার অধীন হয়ে অসুর স্বভাবের বশে আমারই অপ্রিয় কার্য করেছ, আমাকে তোমার ভয় নেই। শর্মিষ্ঠা উত্তর দিলেন, আমি ন্যায় আর ধর্ম অনুসারে চলেছি, তোমাকে ভয় করি না। এই রাজর্ষিকে তুমি যখন পতিরূপে বরণ করেছিলে তখন আমিও করেছিলাম। যিনি আমার সখীর পতি, ধর্মানসারে তিনি আমারও পতি।

 তখন দেবযানী বললেন, বাজা, তুমি আমার অপ্রিয় কার্য করেছ, আর আমি এখানে থাকব না। এই ব’লে তিনি ক্রুদ্ধ হয়ে সাশ্রুলোচনে শুক্রাচার্যের কাছে চললেন, রাজাও পিছু পিছু গেলেন। দেবযানী বললেন, অধর্মের কাছে ধর্ম পরাজিত হয়েছে, যে নীচ সে উপরে উঠেছে, শর্মিষ্ঠা আমাকে অতিক্রম করেছে। পিতা, রাজা যযাতি শর্মিষ্ঠার গর্ভে তিন পুত্র উৎপাদন করেছেন আর দুর্ভাগা