পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৫৯০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শান্তিপর্ব
৫৬৩

বর্ণসংকরদোষ নিবারণ করবে। বেণপুত্র প্রতিজ্ঞা করলে শুত্রুাচার্য তাঁর পুরোহিত হলেন, বালখিল্য প্রভৃতি মুনিরা তাঁর মন্ত্রী হলেন এবং গর্গ তাঁর জ্যোতিষী হলেন।

 এই বেণপুত্র পৃথু বিষ্ণু থেকে অষ্টম পুরুষ। পূর্বোৎপন্ন সূত ও মাগধ নামক দুই ব্যক্তি পৃথুর স্তুতিপাঠক হলেন। পৃথু সূতকে অনূপ-দেশ (কোনও জলময় দেশ) এবং মাগধকে মগধ দেশ দান করলেন। ভূপৃষ্ঠ অসমতল ছিল, পৃথু তা সমতল করলেন। বিষ্ণু ইন্দ্রাদি দেবগণ ও ঋষিগণ পৃথুকে পৃথিবীর রাজপদে প্রতিষ্ঠিত করলেন। পৃথুর রাজত্বকালে জরা দুর্ভিক্ষ ব্যাধি তস্কর প্রভৃতির ভয় ছিল না, তিনি পৃথিবী দোহন ক’রে সপ্তদশ প্রকার শস্য ও বিবিধ অভীষ্ট বস্তু উৎপাদন করেছিলেন। ধর্মপরায়ণ পৃথু প্রজারঞ্জন করতেন সেজন্য ‘রাজা’, এবং ব্রাহ্মণগণকে ক্ষত (বিনাশ বা ক্ষতি) থেকে ত্রাণ করতেন সেজন্য ‘ক্ষত্রিয়’ উপাধি পেয়েছিলেন। তাঁর সময়ে মেদিনী ধর্মের জন্য প্রথিত (খ্যাত) হয়েছিলেন সেজন্যই ‘পৃথিবী’ নাম। পৃথুর রাজ্যে ধর্ম অর্থ ও শ্রী প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

 যুধিষ্ঠির, স্বর্গবাসী পুণ্যাত্মার যখন পণ্যফলভোগ সমাপ্ত হয় তখন তিনি দণ্ডনীতিবিশারদ এবং বিষ্ণুর মহত্ত্বযুক্ত হয়ে পৃথিবীতে রাজা রূপে জন্মগ্রহণ করেন। পণ্ডিতগণ বলেন, নরদেব (রাজা) দেবতারই সমান।

৭। বর্ণাশ্রমধর্ম—চরনিয়োগ—শুল্ক

 ভীষ্ম বললেন, ব্রাহ্মণের ধর্ম ইন্দ্রিয়দমন বেদাভ্যাস ও যাজন। ক্ষত্রিয়ের ধর্ম দান যজন বেদাধ্যয়ন প্রজাপালন ও দুষ্টের দমন; তিনি যাজন ও অধ্যাপন করবেন না। বৈশ্যের ধর্ম দান, বেদাধ্যয়ন, যজ্ঞ, সদুপায়ে ধনসঞ্চয়, এবং পিতার ন্যায় পশুপালন। প্রজাপতি শূদ্রকে অপর তিন বর্ণের দাসরূপে সৃষ্টি করেছেন, তিন বর্ণের সেবা করাই শূদ্রের ধর্ম। শূদ্র ধনসঞ্চয় করবে না, কারণ নীচ লোকে ধন দিয়ে উচ্চশ্রেণীর লোককে বশীভূত করে; কিন্তু ধার্মিক শূদ্র রাজার অনুমতিতে ধনসঞ্চয় করতে পারে। শূদ্রের বেদে অধিকার নেই, ব্রাহ্মণাদি তিন বর্ণের সেবা এবং তাঁদের অনুষ্ঠিত যজ্ঞই শূদ্রের যজ্ঞ।

 ব্রহ্মচর্য গার্হস্থ্য বানপ্রস্থ ও ভৈক্ষ্য — ব্রাহ্মণের এই চার আশ্রম। মোক্ষকামী ব্রাহ্মণ ব্রহ্মচর্যের পরেই ভৈক্ষ্য গ্রহণ করতে পারেন। ক্ষত্রিয়াদি তিন বর্ণ চতুরাশ্রমের সবগুলি গ্রহণ করেন না। যে ব্রাহ্মণ দুশ্চরিত্র ও স্বধর্মভ্রষ্ট তিনি বেদচর্চা করুন বা না করুন, তাঁকে শূদ্রের ন্যায় ভিন্ন পঙ্‌ক্তিতে খেতে দেবে এবং