পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৫৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৬৬
মহাভারত

রক্ষার জন্য আমি ধন প্রার্থনা করছি, ভয় দূর হ’লে এই ধন ফিরিয়ে দেব; শত্রু যদি তোমাদের ধন কেড়ে নেয় তবে তা আর ফিরে পাবে না। তোমরা স্ত্রীপুত্রের জন্যই ধনসঞ্চয় ক’রে থাক, কিন্তু সেই স্ত্রীপুত্রই এখন বিনষ্ট হ’তে বসেছে; আপৎকালে ধনের মায়া করা উচিত নয়।’

 ক্ষত্রিয় রাজা বর্মহীন বিপক্ষকে আক্রমণ করবেন না। তিনি শঠ যোদ্ধার সঙ্গে শঠতার দ্বারা এবং ধার্মিক যোদ্ধার সঙ্গে ধর্মানুসারে যুদ্ধ করবেন। ভীত বা বিজিত লোককে প্রহার করা উচিত নয়। বিষলিপ্ত বাণ বর্জনীয়, অসৎ লোকেই এরূপ অস্ত্র প্রয়োগ করে। যার অস্ত্র ভগ্ন হয়েছে বা বাহন হত হয়েছে, অথবা যে শরণাগত হয়েছে, তাকে বধ করবে না। আহত শত্রুর চিকিৎসা করবে অথবা তাকে নিজের গৃহে পাঠাবে। চিকিৎসার পর ক্ষত সেরে গেলে শত্রুকে মুক্তি দেবে।

 চৈত্র বা অগ্রহায়ণ মাসেই সৈন্যসজ্জা করা প্রশস্ত; তখন শস্য পক্ক হয়, অধিক শীত বা গ্রীষ্ম থাকে না। বিপক্ষ বিপদ্‌গ্রস্ত হ’লে অন্য সময়েও সৈন্যসজ্জা করা যেতে পারে। বৃষ্টিহীন কালে রথাশ্ববহুল সৈন্য এবং বর্ষাকালে পদাতি ও হস্তিবহুল সৈন্য প্রশস্ত। যদি শান্তিস্থাপন সাধ্য হয় তবে যুদ্ধে প্রবৃত্ত হওয়া অনুচিত। সাম দান ও ভেদ নীতি অসম্ভব হ’লেই যুদ্ধ বিধেয়। যুদ্ধকালে রাজা বলবেন, ‘আমার লোকেরা বিপক্ষসৈন্য বধ করছে তা আমার প্রিয়কার্য নয়, আহা, সকলেই বাঁচতে চায়।’ শত্রুর সমক্ষে এইরূপ ব’লে রাজা গোপনে নিজের যোদ্ধাদের প্রশংসা করবেন, এতে হত ও হন্তা উভয়েরই সম্মান হবে।

 যুধিষ্ঠির, আত্মকলহের ফলে গণভেদ[১] ও বংশনাশ হয়, রাজ্যের মূল উচ্ছিন্ন হয়, সেজন্য তার প্রতিবিধান করা আবশ্যক। এই আভ্যন্তরিক ভয়ের তুলনায় বাহ্য শত্রুর ভয় তুচ্ছ। স্বপক্ষের সংঘবদ্ধতাই রাজ্যরক্ষার শ্রেষ্ঠ উপায়।

৯। পিতা মাতা ও গুরু—ব্যবহার—রাজকোষ

 ভীষ্ম বললেন, পিতা মাতা ও গুরুর সেবাই পরম ধর্ম। দশ জন শ্রোত্রিয় (বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণ) অপেক্ষা পিতা শ্রেষ্ঠ, দশ পিতা বা সমস্ত পৃথিবী অপেক্ষা মাতা শ্রেষ্ঠ। কিন্তু আমার মতে পিতা মাতা অপেক্ষাও গুরু শ্রেষ্ঠ। মানুষের নশ্বর দেহ পিতা মাতা হ’তে উৎপন্ন, কিন্তু আচার্যের উপদেশে যে জন্মলাভ হয় তা অজর অমর।

  1. স্বপক্ষের মধ্যে ঐক্যের অভাব।