পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৫৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শান্তিপর্ব
৫৬৭

 যুধিষ্ঠির, ক্রোধাবিষ্ট লোক যদি টিট্টিভ পক্ষীর ন্যায় কর্কশ বাক্য বলে তবে তা গ্রাহ্য করবে না। যে পুরুষাধম নিন্দিত কর্ম ক’রে আত্মপ্রশংসা করে তাকেও উপেক্ষা করবে। দুষ্ট খলের সঙ্গে বাক্যালাপ করাও উচিত নয়। মনু বলেছেন, যার দ্বারা প্রিয় বা অপ্রিয় সকল লোকের প্রতিই অপক্ষপাতে দণ্ডপ্রয়োশ ক’রে প্রজাপালন করা যায় তারই নাম ধর্ম। দণ্ডের ভয়েই লোকে পরস্পরের হানি থেকে বিরত থাকে। সম্যকরূপে ধর্মের নির্ধারণকেই ব্যবহার (আইন) বলে। বাদীপ্রতিবাদীর মধ্যে একজন বিশ্বাস উৎপাদন ক’রে জয়ী হয়, অপর জন দণ্ডলাভ করে; এই ব্যবহারশাস্ত্র রাজাদের জানা বিশেষ আবশ্যক। ব্যবহার দ্বারা যা নির্ধারিত হয় তাই বেদ, তাই ধর্ম, তাই সৎপথ। যে রাজা ধর্মনিষ্ঠ তাঁর দৃষ্টিতে মাতা পিতা ভ্রাতা ভার্যা পউরোহিত কেউ দণ্ডের বহির্ভূত নন।

 রাজকোষ যদি ক্ষয় পায় তবে রাজার বলক্ষয় হয়। আপৎকালে অধর্মও ধর্মতুল্য হয় এবং ধর্মও অধর্মতুল্য হয়। সংকটে পড়লে ব্রাহ্মণ অযাজ্য লোকেরও যাজন করেন, অভোজ্য অন্নও ভোজন করেন। সেইরূপ ক্ষত্রিয় রাজা আপৎকালে ব্রাহ্মণ ও তপস্বী ভিন্ন অন্যের ধন সবলে গ্রহণ করতে পারেন। অরণ্যচারী মুনি ভিন্ন আর কেউ হিংসা বর্জন করে জীবিকানির্বাহ করতে পারে না। ধনবান লোকের অপ্রাপ্য কিছু নেই, রাজকোষ পূর্ণ থাকলে রাজা সকল বিপদ থেকে উত্তীর্ণ হন।


॥ আপদ্‌ধর্মপর্বাধ্যায়॥

১০। আপদ্‌গ্রস্ত রাজা—তিন মৎস্যের উপাখ্যান

 যুধিষ্ঠির প্রশ্ন করলেন, যে রাজা অলস ও দুর্বল, যাঁর ধনাগার শূন্য, মন্ত্রণা প্রকাশ পেয়েছে এবং অমাত্যরা বিপক্ষের বশীভূত হয়েছে, তিনি অন্য রাজা কর্তৃক আক্রান্ত হ’লে কি করবেন?

 ভীষ্ম বললেন, বিপক্ষ রাজা যদি ধার্মিক ও শুদ্ধস্বভাব হন তবে শীঘ্র সন্ধি করা উচিত। সন্ধি অসম্ভব হ’লে যুদ্ধই কর্তব্য। সৈন্য যদি অনুরক্ত ও সন্তুষ্ট থাকে তবে অল্প সৈন্যেও পৃথিবী জয় করা যায়। যদি যুদ্ধ করা নিতান্ত অসম্ভব হয় তবে রাজা দুর্গ ত্যাগ ক’রে কিছুকাল অন্য দেশে থাকবেন এবং পরে উপযুক্ত মন্ত্রণা ক’রে পুনর্বার নিজ রাজ্য অধিকার করবেন।

 শাস্ত্রে আছে, আপদ্‌গ্রস্ত রাজা স্বরাজ্য ও পররাজ্য থেকে ধনসংগ্রহ