পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৫৯৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শান্তিপর্ব
৫৬৯

হয় সে প্রত্যুৎপন্নমতির ন্যায় সংশয়াপন্ন থাকে। অনাগতবিধাতা ও প্রত্যুৎপন্নমতি উভয়েই সুখী হ’তে পারে, কিন্তু দীর্ঘসূত্র বিনষ্ট হয়। যাঁরা বিচার ক’রে যুক্তি অনুসারে কার্য সম্পাদন করেন তাঁরাই সম্যক ফললাভ করেন।

১১। মার্জার-মূষিক সংবাদ

 ভীষ্ম বললেন, অবস্থাভেদে অমিত্রও মিত্র হয়, মিত্রও অমিত্র হয়; দেশ কাল বিবেচনা ক’রে স্থির করতে হয় কে বিশ্বাসের যোগ্য এবং কার সঙ্গে বিরোধ করা উচিত। হিতার্থী পণ্ডিতগণের সঙ্গে চেষ্টা ক’রে সন্ধি করা উচিত, এবং প্রাণরক্ষার জন্য শত্রুর সঙ্গেও সন্ধি করা বিধেয়। যিনি স্বার্থ বিচার ক’রে উপযুক্ত কালে অমিত্রের সঙ্গে সন্ধি এবং মিত্রের সঙ্গে বিরোধ করেন তিনি মহৎ ফল লাভ করেন। এক পুরাতন উপাখ্যান বলছি শোন। —

 কোনও মহারণ্যে এক বিশাল বটবৃক্ষ ছিল। পলিত নামে এক মূষিক সেই বটবৃক্ষের মূলে শতদ্বার গর্ত নির্মাণ ক’রে তাতে বাস করত। লোমশ নামে এক মার্জার সেই বটের শাখায় থাকত এবং শাখাবাসী পক্ষীদের ভক্ষণ করত। এক চণ্ডাল পশুপক্ষী ধরবার জন্য প্রত্যহ সেই বৃক্ষের নীচে ফাঁদ পেতে রাখত। একদিন লোমশ সতর্কতা সত্ত্বেও সেই ফাঁদে পড়ল। চিরশত্রু বিড়াল আবদ্ধ হ’লে মূষিক নির্ভয়ে বিচরণ করতে লাগল। সে দেখলে, ফাঁদের মধ্যে আমিষ খাদ্য রয়েছে; তখন সে মনে মনে বিড়ালকে উপহাস ক’রে ফাঁদের উপর থেকে আমিষ খেতে লাগল। সেই সময়ে এক নকুল (বেঁজি) এবং এক পেচকও সেখানে উপস্থিত হ’ল। মূষিক ভাবলে, এখন আমার তিন শত্রু সমাগত হয়েছে, আমি নীতিশাস্ত্র অনুসারে বিড়ালের সাহায্য নেব। এই মূঢ় বিড়াল বিপদে পড়েছে, প্রাণরক্ষার জন্য সে আমার সঙ্গে সন্ধি করবে। মুষিক বললে, ওহে মার্জার, তুমি জীবিত আছ তো? ভয় নেই, তুমি রক্ষা পাবে; যদি আমাকে আক্রমণ না কর তবে আমি তোমাকে বিপদ থেকে উদ্ধার করব। আমিও সংকটাপন্ন, ওই নকুল আর পেচক লোলুপ হয়ে আমাকে দেখছে। তুমি আর আমি বহুকাল এই বটবৃক্ষের আশ্রয়ে বাস করছি, তুমি শাখায় থাক, আমি মূলদেশে থাকি। যে কাকেও বিশ্বাস করে না এবং যাকে কেউ বিশ্বাস করে না, পণ্ডিতরা তেমন লোকের প্রশংসা করেন না। অতএব তোমার আর আমার মধ্যে প্রণয় হ’ক, তুমি যদি আমাকে রক্ষা কর তবে আমিও তোমাকে রক্ষা করব।