পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৫৯৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৭০
মহাভারত

 বৈদূর্যলোচন মার্জার মূষিককে বললে, সৌম্য, তোমার কল্যাণ হ’ক। যদি উদ্ধারের উপায় জান তবে আর বিলম্ব ক’রো না, তুমি আর আমি দুজনেই বিপদাপন্ন, অতএব আমাদের সন্ধি হ’ক। মুক্তি পেলে আমি তোমার উপকার ভুলব না। আমি মান বিসর্জন দিয়ে তোমার শরণাপন্ন হ’লাম।

 মূষিক আশ্বস্ত হয়ে বিড়ালের বক্ষস্থলে লগ্ন হ’ল, তখন নকুল ও পেচক হতাশ হয়ে চ’লে গেল। মূষিক ধীরে ধীরে বিড়ালের পাশ কাটতে লাগল। বিড়াল বললে, সখা, বিলম্ব করছ কেন? আমি যদি পূর্বে কোনও অপরাধ ক’রে থাকি তবে ক্ষমা কর, আমার উপর প্রসন্ন হও। মূষিক উত্তর দিলে, সখা, আমি সময়জ্ঞ। যদি অসময়ে তোমাকে বন্ধনমুক্ত করি তবে আমি তোমার কবলে পড়ব। তুমি নিশ্চিত হও, আমি তোমার পাশের সমস্ত তন্তু কেটে ফেলেছি, কেবল একটি অবশিষ্ট রেখেছি; চণ্ডালকে আসতে দেখলেই তা কেটে ফেলব, তখন তুমি ত্রস্ত হয়ে বৃক্ষশাখায় আশ্রয় নেবে, আমিও গর্তে প্রবেশ করব।

 রাত্রি প্রভাত হ’লে বিকটমূর্তি চণ্ডাল কুকুরের দল নিয়ে উপস্থিত হ’ল। মূষিক তখনই বিড়ালকে বন্ধনমুক্ত করলে, বিড়াল বৃক্ষশাখায় এবং মূষিক তার গর্তে গেল। চণ্ডাল হতাশ হয়ে চ’লে গেল। ভয়মুক্ত হয়ে বিড়াল মূষিককে বললে, সখা, তুমি আমার প্রাণরক্ষা করেছ, এখন বিপদ দূর হয়েছে, তবে আমার কাছে আসছ না কেন? তুমি সবান্ধবে আমার সঙ্গে এস, আমার আত্মীয়বন্ধগণ সকলেই তোমার সম্মান করবে। তুমি বদ্ধিতে শুত্রুাচার্য তুল্য; আমার অমাত্য হও এবং পিতার ন্যায় আমাকে উপদেশ দাও।

 তখন সেই পলিত নামক মূষিক বললে, হে লোমশ, মিত্রতা ও শত্রুতা স্থির থাকে না, প্রয়োজন অনুসারে লোকে মিত্র বা শত্রু হয়; স্বার্থই বলবান। যে কারণে আমাদের সৌহার্দ হয়েছিল সেই কারণ আর নেই। এখন কিজন্য আমি তোমার প্রিয় হ’তে পারি? তুমি আমার শত্রু ছিলে, স্বার্থসিদ্ধির জন্য মিত্র হয়েছিলে, এখন আবার শত্রু হয়েছ। আমাকে ভক্ষণ করা ভিন্ন তোমার এখন অন্য কর্তব্য নেই। তোমার ভার্যা আর পুত্রেরাই বা আমাকে নিষ্কৃতি দেবে কেন? সখা, তুমি যাও, তোমার কল্যাণ হ’ক। যদি কৃতজ্ঞ হ’তে চাও তবে আমি যখন অসতর্ক থাকব তখন আমার অনুসরণ ক’রো না, তা হ’লেই সৌহার্দ্য রক্ষা হবে।

 উপাখ্যান শেষ ক’রে ভীষ্ম বললেন, যুধিষ্ঠির, সেই মূষিক দুর্বল হলেও একাকী বুদ্ধিবলে বহু শত্রুর হাত থেকে মুক্তি পেয়েছিল। যারা পূর্বে শত্রুতা