পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৫৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শান্তিপর্ব
৫৭১

ক’রে আবার মৈত্রীর চেষ্টা করে, পরস্পরকে প্রতারণা করাই তাদের উদ্দেশ্য। তাদের মধ্যে যে অধিক বুদ্ধিমান সে অন্যকে বঞ্চনা করে, যে নির্বোধ সে বঞ্চিত হয়।

১২। বিশ্বামিত্র-চণ্ডাল-সংবাদ

 যুধিষ্ঠির বললেন, পিতামহ, যখন ধর্ম লোপ পায়, লোকে পরম্পরকে বঞ্চনা করে, অনাবৃষ্টির ফলে খাদ্যাভাব হয়, জীবিকার সমস্ত উপায় দস্যুর হস্তগত হয়, সেই আপৎকালে কিরূপে জীবনযাত্রা নির্বাহ করা উচিত? ভীষ্ম বললেন, আমি এক ইতিহাস বলছি শোন। —

 ত্রেতা ও দ্বাপর যুগের সন্ধিকালে দ্বাদশবর্ষব্যাপী ঘোর অনাবৃষ্টি হয়েছিল। কৃষি ও গোরক্ষা অসম্ভব হ’ল, চোর এবং রাজাদের উৎপীড়নে গ্রাম নগর জনশূন্য হ’ল, গবাদি পশু নষ্ট হয়ে গেল, মানুষ ক্ষুধিত হয়ে পরস্পরের মাংস খেতে লাগল। সেই সময়ে মহর্ষি বিশ্বামিত্র স্ত্রীপুত্রকে কোনও জনপদে ফেলে রেখে ক্ষুধার্ত হয়ে নানা স্থানে পর্যটন করতে লাগলেন। একদিন তিনি চণ্ডালবসতিতে এসে দেখলেন, ভগ্ন কলস, কুক্কুরের চর্ম, শূকর ও গর্দভের অস্থি, এবং মৃত মনুষ্যের বস্ত্র চারিদিকে ছড়ানো রয়েছে। কোথাও কুক্কুট ও গর্দভ ডাকছে, কোথাও চণ্ডালরা কলহ করছে। বিশ্বামিত্র খাদ্যের অন্বেষণ করলেন, কিন্তু কোথাও মাংস অন্ন বা ফলমূল পেলেন না; তখন তিনি দুর্বলতায় অবসন্ন হয়ে ভূপতিত হলেন। এমন সময়ে তিনি দেখতে পেলেন, এক চণ্ডালের গৃহে সদ্যোনিহত কুক্কুরের মাংস রয়েছে। বিশ্বামিত্র ভাবলেন, প্রাণরক্ষার জন্য চুরি করলে দোষ হবে না। রাত্রিকালে চণ্ডালরা নিদ্রিত হ’লে বিশ্বামিত্র কুটীরে প্রবেশ করলেন। সেই কুটীরস্থ চণ্ডাল জাগরিত হয়ে বললে, কে তুমি মাংস চুরি করতে এসেছ? তোমাকে আর বাঁচতে হবে না।

 বিশ্বামিত্র উদ্‌বিগ্ন হয়ে বললেন, আমি বিশ্বামিত্র, ক্ষুধায় মৃতপ্রায় হয়ে তোমার কুক্কুরের জঘনমাংস হরণ করতে এসেছি। আমার বেদজ্ঞান লুপ্ত হয়েছে, আমি খাদ্যাখাদ্য বিচারে অক্ষম, অধর্ম জেনেও আমি চৌর্যে প্রবৃত্ত হযেছি। অগ্নি যেমন সর্বভূক, আমাকেও এখন সেইরূপ জেনো।

 চণ্ডাল সসম্ভ্রমে শয্যা থেকে উঠে কৃতাঞ্জলি হয়ে বললে, মহর্ষি, এমন কার্য করবেন না যাতে আপনার ধর্মহানি হয়। পণ্ডিতদের মতে কুক্কুর শৃগালেরও অধম, আবার তার জঘনের মাংস অন্য অঙ্গের মাংস অপেক্ষা অপবিত্র। আপনি ধার্মিকগণের অগ্রগণ্য, প্রাণরক্ষার জন্য অন্য উপায় অবলম্বন করুন। বিশ্বামিত্র বললেন, আমার