পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৫৯৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৭২
মহাভারত

অন্য উপায় নেই। প্রাণরক্ষার জন্য যে কোনও উপায় বিধেয়, সবল হয়ে ধর্মাচরণ করলেই চলবে। বেদরূপে অগ্নি আমার বল, তারই প্রভাবে আমি অভক্ষ্য মাংস খেয়ে ক্ষুধাশান্তি করব। চণ্ডাল বললে, এই কুক্কুরমাংসে আয়ুবৃদ্ধি হয় না, প্রাণ তৃপ্ত হয় না। পঞ্চনখ প্রাণীর মধ্যে শশকাদি পঞ্চ পশুই দ্বিজাতির ভক্ষ্য, অতএব আপনি অন্য খাদ্য সংগ্রহের চেষ্টা করুন, অথবা ক্ষুধার বেগ দমন ক’রে ধর্মরক্ষা করুন।

 বিশ্বামিত্র বললেন, এখন আমার পক্ষে মৃগমাংস আর কুক্কুরমাংস সমান। আমার প্রাণসংশয় হয়েছে, অসৎ কার্য করলেও আমি চণ্ডাল হয়ে যাব না। চণ্ডাল বললে, ব্রাহ্মণ কুকর্ম করলে তাঁর ব্রাহ্মণত্ব নষ্ট হয়, এজন্য আমি আপনাকে নিবারণ করছি। নীচ চণ্ডালের গৃহ থেকে কুক্কুরমাংস হরণ করলে আপনার চরিত্র দূষিত হবে, আপনাকে অনুতাপ করতে হবে। বিশ্বামিত্র বললেন, ভেকের চিৎকার শুনে বৃষ জলপানে বিরত হয় না; তোমার উপদেশ দেবার অধিকার নেই।

 বিশ্বামিত্র চণ্ডালের কোনও আপত্তি মানলেন না, মাংস নিয়ে বনে চ’লে গেলেন। আগে দেবগণকে তৃপ্ত ক’রে তার পর সপরিবারে মাংস ভোজন করবেন এই স্থির ক’রে তিনি যথাবিধি অগ্নি আহরণ ও চরু[১] পাক ক’রে দেবগণ ও পিতৃগণকে আহ্বান করলেন। তখন দেবরাজ ইন্দ্র প্রচুর বারিবর্ষণ ক’রে ওষধি ও প্রজাগণকে সঞ্জীবিত করলেন। বিশ্বামিত্রের পাপ নষ্ট হ’ল, তিনি পরমগতি লাভ করলেন।


 আখ্যান শেষ ক’রে ভীষ্ম বললেন, চরুর আস্বাদ না নিয়েই বিশ্বামিত্র দেবগণ ও পিতৃগণকে তৃপ্ত করেছিলেন। বিপদাপন্ন হ’লে বিদ্বান লোকের যেকোনও উপায়ে আত্মরক্ষা করা উচিত; জীবিত থাকলে তিনি বহু পুণ্য অর্জন ও শুভলাভ করতে পারবেন।

 যুধিষ্ঠির বললেন, আপনি যে অশ্রদ্ধেয় ঘোর কর্ম কর্তব্য ব’লে নির্দেশ করলেন তা শুনে আমি বিষাদগ্রস্ত ও মোহাচ্ছন্ন হয়েছি, আমার ধর্মজ্ঞান শিথিল হচ্ছে। আপনার কথিত ধর্মে আমার প্রবৃত্তি হচ্ছে না। ভীষ্ম বললেন, আমি তোমাকে বেদাদি শাস্ত্র থেকে উপদেশ দিচ্ছি না, পণ্ডিতগণ বুদ্ধিবলে আপৎকালের কর্তব্য নির্ণয় করেছেন। ধর্মের কেবল এক অংশ আশ্রয় করা উচিত নয়, রাজধর্মের বহু শাখা। উগ্র কর্ম সাধনের জন্য বিধাতা তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। শুত্রুাচার্য বলেছেন, আপৎকালে অশিষ্ট লোকের নিগ্রহ এবং শিষ্ট লোকের পালনই ধর্ম।

  1. হব্য। এখানে কুকুরের মাংস।