পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ভূমিকা

 কৃষ্ণদ্বৈপায়ন ব্যাসের মহাভারত প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্যের বৃহত্তম গ্রন্থ এবং জগদ্‌বিখ্যাত গ্রন্থসমূহের অন্যতম। প্রচুর আগ্রহ থাকলেও এই বিশাল গ্রন্থ বা তার অনুবাদ আগাগোড়া পড়া সাধারণ লোকের পক্ষে কষ্টসাধ্য। যাঁরা অনুসন্ধিৎসু তাঁদের দৃষ্টিতে সমগ্র মহাভারতই পুরাবৃত্ত ঐতিহ্য ও প্রাচীন সংস্কৃতির অমূল্য ভাণ্ডার, এর কোনও অংশই উপেক্ষণীয় নয়। কিন্তু সাধারণ পাঠক মহাভারতের আখ্যানভাগই প্রধানত পড়তে চান, আনুষঙ্গিক বহু সন্দর্ভ তাঁদের পক্ষে নীরস ও বাধাস্বরূপ।

 এই পুস্তক ব্যাসকৃত মহাভারতের সারাংশের অনুবাদ। এতে মূল গ্রন্থের সমগ্র আখ্যান এবং প্রায় সমস্ত উপাখ্যান আছে, কেবল সাধারণ পাঠকের যা মনোরঞ্জন নয় সেই সকল অংশ সংক্ষেপে দেওয়া হয়েছে, যেমন বিস্তারিত বংশতালিকা, যুদ্ধবিবরণের বাহুল্য, রাজনীতি ধর্মতত্ত্ব ও দর্শন বিষয়ক প্রসঙ্গ, দেবতাদের স্তুতি, এবং পুনরুক্ত বিষয়। স্থলবিশেষে নিতান্ত নীরস অংশ পরিত্যক্ত হয়েছে। এই সারানবাদের উদ্দেশ্য— মূল রচনার ধারা ও বৈশিষ্ট্য যথাসম্ভব বজায় রেখে সমগ্র মহাভারতকে উপন্যাসের ন্যায় সুখপাঠ্য করা।


 মহাভারতকে সংহিতা অর্থাৎ সংগ্রহগ্রন্থ এবং পঞ্চম বেদ স্বরূপ ধর্মগ্রন্থ বলা হয়। যেসকল খণ্ড খণ্ড আখ্যান ও ঐতিহ্য পুরাকালে প্রচলিত ছিল তাই সংগ্রহ ক’রে মহাভারত সংকলিত হয়েছে। এতে ভগবদ্‌গীতা প্রভৃতি যেসকল দার্শনিক সন্দর্ভ আছে তা অধ্যাত্মবিদ্যার্থীর অধ্যয়নের বিষয়। প্রত্নান্বেষীর কাছে মহাভারত অতি প্রাচীন সমাজ ও নীতি বিষয়ক তথ্যের অনন্ত ভাণ্ডার। ভূগোল জীবতত্ত্ব পরলোক প্রভৃতি সম্বন্ধে প্রাচীন ধারণা কি ছিল তাও এই গ্রন্থ থেকে জানা যায়। প্রচুর কাব্যরস থাকলেও মহাভারতকে মহাকাব্য বলা হয় না, ইতিহাস নামেই এই গ্রন্থ প্রসিদ্ধ। রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন— ‘ইহা কোনও ব্যক্তিবিশেষের রচিত ইতিহাস নহে, ইহা একটি জাতির স্বরচিত স্বাভাবিক ইতিহাস।’

 মহাভারতে সত্য ঘটনার বিবরণ কতটা আছে, কুরুপাণ্ডবযুদ্ধ মূলত কুরুপাঞ্চালযুদ্ধ কিনা, পাণ্ডু albino ছিলেন কিনা, কুন্তীর বহুদেবভজনা এবং একই কন্যার সহিত পঞ্চ পাণ্ডব ভ্রাতার বিবাহ কোনও বহুভর্তৃক (polyandrous) জাতির সূচনা করে কিনা, যুধিষ্ঠিরাদির পিতামহ কৃষ্ণদ্বৈপায়নই আদিম মহাভারতের রচয়িতা কিনা, ইত্যাদি আলোচনা এই ভূমিকার অধিকারবহির্ভূত। মহাভারতে আছে, কৃষ্ণদ্বৈপায়ন ব্যাস এই গ্রন্থের রচয়িতা; তিনি তাঁর পৌত্রের