পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৬০০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শান্তিপর্ব
৫৭৩

১৩। খড়্‌গের উৎপত্তি

 খড়্‌গযুদ্ধবিশারদ নকুল বললেন, পিতামহ, ধনুই শ্রেষ্ঠ প্রহরণ রূপে গণ্য হয়, কিন্তু আমার মতে খড়্‌গই প্রশংসার যোগ্য। খড়্‌গধারী বীর ধনুর্ধর ও গদাশক্তিধর শত্রুগণকে বাধা দিতে পারেন। আপনার মতে কোন্ অস্ত্র উৎকৃষ্ট? কে খড়্‌গ উদ্‌ভাবন করেছিলেন?

 ভীষ্ম বললেন, পুরাকালে হিরণ্যাক্ষ হিরণ্যকশিপু প্রহ্লাদ বিরোচন বলি প্রভৃতি দানবেন্দ্রগণ অধর্মরত হয়েছিলেন। প্রজারক্ষার নিমিত্ত ব্রহ্মা ব্রহ্মর্ষিগণের সঙ্গে হিমালয়শৃঙ্গে গিয়ে সেখানে এক যজ্ঞের অনুষ্ঠান করলেন। সেই যজ্ঞে হুতাশন থেকে এক আশ্চর্য ভূত উত্থিত হ’ল, তার বর্ণ নীলোৎপলতুল্য, দন্তসকল তীক্ষ্ণ, উদর কৃশ, দেহ অতি উন্নত। এই দুর্ধর্ষ অমিততেজা ভূতের উত্থানে বসুন্ধরা বিচলিত এবং মহাসাগর বিক্ষুব্ধ হ’ল, উল্কাপাত এবং নানাপ্রকার দুর্লক্ষণ দেখা গেল। ব্রহ্মা বললেন, জগতের রক্ষা এবং দানবগণের বিনাশের নিমিত্ত আমি অসি নামক এই বীর্যবান ভূতকে চিন্তা করেছিলাম। ক্ষণকাল পরে সেই ভূত কালান্তকতুল্য ভীষণ খরধার নির্মল নিস্ত্রিংশ[১] রূপে প্রকাশিত হ’ল। ব্রহ্মা সেই অধর্ম নিবারক তীক্ষ্ণ অস্ত্র ভগবান রুদ্রকে দিলেন। রুদ্র সেই খড়্‌গের আঘাতে সমস্ত দানব বিনষ্ট করলেন এবং জগতে ধর্ম সংস্থাপন ক’রে মঙ্গলময় শিবরূপ ধারণ করলেন। তার পর তিনি সেই রুধিরাক্ত অসি ধর্মপালক বিষ্ণুকে দিলেন। বিষ্ণুর কাছ থেকে ক্রমে ক্রমে মরীচি, মহর্ষিগণ, ইন্দ্র, লোকপালগণ, সূর্যপুত্র মনু, মনুর পুত্র ক্ষুপ, তার পর ইক্ষাকু পুরূরবা প্রভৃতি, তার পর ভরদ্বাজ, দ্রোণ, এবং পরিশেষে কৃপাচার্য সেই অস্ত্র পেয়েছিলেন। কৃপের কাছ থেকে তুমি ও তোমার ভ্রাতারা সেই পরম অসি লাভ করেছ। মাদ্রীপুত্র, সকল প্রহরণের মধ্যে খড়্‌গই প্রধান। ধনুর উদ্‌ভাবক বেণপুত্র পৃথু, যিনি ধর্মানুসারে প্রজাপালন এবং পৃথিবী দোহন ক’রে বহু শস্য উৎপাদন করেছিলেন; অতএব ধনুও আদরণীয়। যুদ্ধবিশারদ বীরগণের সর্বদা অসির পূজা করা উচিত।

১৪। কৃতঘ্ন গৌতমের উপাখ্যান

 ভীষ্মের কথা শেষ হ’লে যুধিষ্ঠির গৃহে গেলেন এবং বিদুর ও ভ্রাতাদের সঙ্গে ধর্ম অর্থ ও কাম সম্বন্ধে বহু আলাপ করলেন। পরদিন তাঁরা পুনর্বার ভীষ্মের নিকট উপস্থিত হলেন।

  1. যে খড়্‌গ লম্বায় ত্রিশ আঙুলের বেশী।