পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৬০৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৭৬
মহাভারত

কাছে নিয়ে গেলেন। রাজধর্মার মৃতদেহ দেখে সকলেই কাতর হয়ে কাঁদতে লাগলেন। বিরূপাক্ষ বললেন, এই পাপাত্মা গৌতমকে এখনই বধ কর, এর মাংস রাক্ষসরা খাক। রাক্ষসরা বিনীত হয়ে বললে, মহারাজ, একে দস্যুর হাতে দিন, এর পাপদেহ আমরা খেতে পারব না। বিরূপাক্ষের আদেশে রাক্ষসরা গৌতমকে খণ্ড খণ্ড ক’রে দস্যুদের দিলে, কিন্তু দস্যুরাও খেতে চাইল না। মিত্রদ্রোহী কৃতঘ্ন নৃশংস লোক কীটেরও অভক্ষ্য।

 বিরূপাক্ষ যথাবিধি রাজধর্মার প্রেতকার্য করলেন। সেই সময়ে দক্ষকন্যা পয়স্বিনী সুরভি ঊর্ধ্বে আবির্ভূত হলেন, তাঁর মুখ থেকে দগ্ধফেন নিঃসৃত হয়ে চিতার উপর পড়ল। বকরাজ রাজধর্মা পুনর্জীবিত হলেন। তখন ইন্দ্র এসে বললেন, পুরাকালে রাজধর্মা একবার ব্রহ্মার সভায় যান নি; ব্রহ্মা রুষ্ট হয়ে অভিশাপ দিয়েছিলেন, তারই ফলে রাজধর্মার নিধন হয়েছিল।

 রাজধর্মা ইন্দ্রকে বললেন, দেবরাজ, যদি আমার উপর দয়া থাকে তবে আমার প্রিয় সখা গৌতমকে পুনর্জীবিত করুন। গৌতম জীবন লাভ করলে রাজধর্মা তাঁকে আলিঙ্গন ক’রে ধনরত্নের সহিত বিদায় দিলেন এবং পূর্বের ন্যায় ব্রহ্মার সভায় গেলেন। গৌতম শবরালয়ে ফিরে এলেন এবং পুনর্ভু (দ্বিতীয়বার বিবাহিতা) শূদ্রা পত্নীর গর্ভে দুষ্কৃতকারী বহু পুত্রের জন্ম দিলেন। দেবগণের শাপে কৃতঘ্ন গৌতম মহানরকে গিয়েছিলেন।

 আখ্যান শেষ ক’রে ভীষ্ম বললেন, কৃতঘ্ন লোকের যশ সুখ ও আশ্রয় নেই, তারা কিছুতেই নিষ্কৃতি পায় না। মিত্র হ’তে সম্মান ও সর্বপ্রকার ভোগ্য বস্তু লাভ করা যায়, বিপদ থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়। বিচক্ষণ লোকে মিত্রের সমাদর করেন এবং মিত্রদ্রোহী কৃতঘ্ন নরাধমকে বর্জন করেন।


॥ মোক্ষধর্মপর্বাধ্যায়॥

১৫। আত্মজ্ঞান—ব্রাহ্মণ-সেনজিৎ-সংবাদ

 যুধিষ্ঠির বললেন, পিতামহ, আপনি রাজধর্মের অন্তর্গত আপদধর্ম বিবৃত করেছেন, এখন যে ধর্ম সকলের পক্ষেই শ্রেয় তার উপদেশ দিন। ধনক্ষয় হ’লে অথবা স্ত্রীপুত্রাদির মৃত্যু হ’লে যে বুদ্ধি দ্বারা শোক দূর করা যায় তার সম্বন্ধেও বলুন।