পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৬০৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শান্তিপর্ব
৫৭৯

 যুধিষ্ঠির, কশ্যপবংশীয় এক ঋষিপুত্র কোনও বৈশ্যের রথের নীচে প’ড়ে আহত হয়েছিলেন। ক্ষুব্ধ ও ক্রুদ্ধ হয়ে তিনি প্রাণত্যাগের সংকল্প করলেন। তখন ইন্দ্র শৃগালের রূপ ধারণ ক’রে তাঁর কাছে এসে বললেন, তুমি দুর্লভ মানবজন্ম, ব্রাহ্মণত্ব ও বেদবিদ্যা লাভ করেছ। তোমার দশ-অঙ্গুলিযক্ত দুই হস্ত আছে, তার দ্বারা সকল কর্ম করতে পার। সৌভাগ্যক্রমে তুমি শৃগাল কীট মূষিক সর্প বা ভেক হও নি, মনুষ্য এবং ব্রাহ্মণ হয়েছ; এতেই তোমার সন্তুষ্ট থাকা উচিত। আমার অবস্থা দেখ, আমার হস্ত নেই, দংশক কীটাদি তাড়াতে পারি না; আবার আমার চেয়েও নিকৃষ্ট জীব আছে। অতএব তুমি নিজের অবস্থায় তুষ্ট হও। যিনি কামনা রোধ করতে পারেন তিনি ভয় থেকে মুক্ত হন। মানুষ যে বস্তুর রসজ্ঞ নয় তাতে তার কামনা হয় না। মদ্য ও লট্বাক (চড়াই) পক্ষীর মাংস অপেক্ষা উত্তম ভক্ষ্য কিছুই নেই, কিন্তু তুমি এই দুইএর স্বাদ জান না এজন্য তোমার কামনা নেই। অতএব ভক্ষণ স্পর্শন দর্শন দমিত করাই শ্রেয়স্কর। তুমি প্রাণবিসর্জনের সংকল্প ত্যাগ ক’রে ধর্মাচরণে উদ্‌যোগী হও। এইপ্রকার উপদেশ দিয়ে ইন্দ্র নিজ রূপ ধারণ করলেন, তখন ঋষিপুত্র দেবরাজকে পূজা ক’রে স্বগৃহে চ’লে গেলেন।

১৭। সৃষ্টিতত্ত্ব—সদাচার

 যুধিষ্ঠির বললেন, পিতামহ, স্থাবরজঙ্গম সমেত এই জগৎ কি থেকে সৃষ্ট হ’ল, প্রলয়কালে কিসে লয় পাবে, মৃত্যুর পরে জীব কোথায় যায়, এইসব আমাকে বলুন। ভীষ্ম বললেন, ভরদ্বাজের প্রশ্নের উত্তরে মহর্ষি ভৃগু যা বলেছিলেন শোন।— মানস নামে এক দেব আছেন, তিনি অনাদি অজর অমর অব্যক্ত শাশ্বত অক্ষয় অব্যয়; তাঁ হ’তেই সমস্ত জীব সৃষ্ট হয় এবং তাঁতেই লীন হয়। সেই দেবই মহৎ অহংকার আকাশ সলিল প্রভৃতির মূল কারণ। মানসদেবের সৃষ্ট পদ্ম হ’তে ব্রহ্মার উৎপত্তি। ব্রহ্মা উৎপন্ন হয়েই ‘সোঽহং’ বলেছিলেন, সেজন্য তিনি অহংকার নামে খ্যাত হয়েছেন। পর্বত মেদিনী সাগর আকাশ বায়ু, অগ্নি চন্দ্র সূর্য প্রভৃতি তাঁরই অঙ্গ। অহংকারের যিনি স্রষ্টা, সেই আত্মভূত দুর্জ্ঞেয় আদিদেবই ভগবান অনন্ত-বিষ্ণু।

 আকাশের অন্ত নেই। যে স্থান থেকে চন্দ্রসূর্যও দেখা যায় না সেখানে স্বয়ংদীপ্ত দেবগণ বিরাজ করেন। পৃথিবীর অন্তে সমুদ্র, তার পর অন্ধকার,