পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৬০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৮০
মহাভারত

তার পর সলিল, তার পর অগ্নি। আবার রসাতলের পর সলিল, তার পর সর্পলোক, তার পর পুনর্বার আকাশ জল প্রভৃতি। এই সকলের তত্ত্ব দেবগণেরও দুর্জ্ঞেয়।

 জীবের বিনাশ নেই, দেহ নষ্ট হ’লে জীব দেহান্তরে যায়। কাষ্ঠ দগ্ধ হয়ে গেলে অগ্নি যেমন অদৃশ্যভাবে আকাশ আশ্রয় করে, শরীরত্যাগের পর জীবও সেইরূপ আকাশের ন্যায় অবস্থান করে। শরীরব্যাপী অন্তরাত্মাই দর্শন শ্রবণ প্রভৃতি কার্য নির্বাহ করেন এবং সুখদুঃখ অনুভব করেন।

 সত্যই ব্রহ্ম ও তপস্যা, সত্যই প্রজাগণকে সৃষ্টি ও পালন করে। ধর্ম ও অর্থ হ’তেই সুখের উৎপত্তি হয়, যার শারীরিক ও মানসিক দুঃখ নেই সেই সুখ অনভেব করে। স্বর্গে নিত্য সুখ, ইহলোকে সুখদুঃখ দুইই আছে, নরকে কেবল দুঃখ। সুখই পরমপদার্থ।

 যুধিষ্ঠির বললেন, পিতামহ, আমি সদাচারের বিধি শুনতে ইচ্ছা করি। ভীষ্ম বললেন, সদাচারই সাধুদের লক্ষণ, অসাধুরা দুরাচার। প্রাতঃকালে শৌচের পর দেবতাদের তর্পণ ক’রে নদীতে অবগাহন করবে। সূর্যোদয় হ’লে নিদ্রা যাবে না। সায়ংকালে ও প্রাতঃকালে পূর্ব ও পশ্চিম-মুখ হয়ে সাবিত্রীমন্ত্র জপ করবে। হস্ত পদ মুখ আর্দ্র ক’রে মৌনী হয়ে ভোজন করবে। অতিথি স্বজন ও ভৃত্যদের সঙ্গে সমানভাবে ভোজন করাই প্রশংসনীয়। ব্রাহ্মণের উচ্ছিষ্ট জননীর হৃদয়ের ন্যায় অমৃততুল্য। যিনি মাংসভক্ষণ ত্যাগ করেছেন তিনি যজ্ঞে সংস্কৃত মাংসও খাবেন না। উদীয়মান সূর্য এবং নগ্না পরস্ত্রীকে দেখবে না। সূর্যের অভিমুখে মূত্রত্যাগ নিজের পুরীষ দর্শন এবং স্ত্রীলোকের সঙ্গে একত্র শয়ন ও ভোজন করবে না। জ্যেষ্ঠদের ‘তুমি’ বলবে না।

 তার পর যুধিষ্ঠিরের অনুরোধে ভীষ্ম অধ্যাত্মযোগ, ধ্যানযোগ, জপানুষ্ঠান ও জ্ঞানযোগ সম্বন্ধে সবিস্তারে বললেন।

১৮। বরাহরূপী বিষ্ণু—যজ্ঞে অহিংসা—প্রাণদণ্ডের নিন্দা

 যুধিষ্ঠির বললেন, পিতামহ, কৃষ্ণ তির্যগ্‌যোনিতে বরাহরূপে কেন জন্মেছিলেন তা শুনতে ইচ্ছা করি। ভীষ্ম বললেন, পুরাকালে নরক প্রভৃতি বলদর্পিত অসুরগণ দেবগণের সমৃদ্ধি দেখে ঈর্ষান্বিত হয়েছিল। তাদের উৎপীড়নে বসুমতী ভারাক্রান্ত ও কাতর হলেন। তখন ব্রহ্মা দেবগণকে আশ্বাস দিলেন যে