পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৬০৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শান্তিপর্ব
৫৮১

বিষ্ণু দানবগণকে সংহার করবেন। তার পর মহাতেজা বিষ্ণু বরাহের মূর্তি ধারণ ক’রে ভূগর্ভে গিয়ে দানবদের প্রতি ধাবিত হলেন। তাঁর নিনাদে ত্রিলোক বিক্ষুব্ধ হ’ল, দানবগণ বিষ্ণুতেজে মোহিত ও গতাসু হয়ে পতিত হ’ল। মহর্ষিগণ স্তব করলে বরাহরূপী বিষ্ণু রসাতল থেকে উত্থিত হলেন। সেই মহাযোগী ভূতভাবন পদ্মনাভ বিষ্ণুর প্রভাবে সকলের ভয় ও শোক দূর হয়েছিল।

 তার পর যুধিষ্ঠিরের প্রশ্নের উত্তরে ভীষ্ম বিবিধ দার্শনিক তত্ত্ব বিবৃত ক’রে অহিংসা সম্বন্ধে এই উপদেশ দিলেন।—পুরাকালে রাজা বিচখ্যু গোমেধযজ্ঞে নিহত বৃষের দেহ দেখে এবং গোসকলের আর্তনাদ শুনে কাতর হয়ে এই আশীর্বাদ করেছিলেন — গোজাতির স্বস্তি হ’ক। যারা মূঢ় ও সংশয়গ্রস্ত নাস্তিক তারাই যজ্ঞে পশুবধের প্রশংসা করে। ধর্মাত্মা মনু সকল কর্মে অহিংসারই উপদেশ দিয়েছেন। সর্বভূতে অহিংসাই সকল ধর্মের শ্রেষ্ঠ গণ্য হয়। ধূর্তেরাই সুরা মৎস্য মাংস মধু ও কৃশরান্ন ভোজন প্রবর্তিত করেছে, বেদে এসকলের বিধান নেই। সকল যজ্ঞেই বিষ্ণুর অধিষ্ঠান জেনে ব্রাহ্মণগণ পায়স ও পুষ্প দ্বারাই অর্চনা করেন। শুদ্ধস্বভাব মহাত্মাদের মতে যা কিছু উত্তম গণ্য হয় তাই দেবতাকে নিবেদন করা যেতে পারে।


 যুধিষ্ঠির জিজ্ঞাসা করলেন, কোনও লোককে বধদণ্ড না দিয়েও রাজা কোন্ উপায়ে প্রজাশাসন করতে পারেন? ভীষ্ম বললেন, আমি এক পুরাতন ইতিহাস বলছি শোন।— দ্যুমৎসেনের আজ্ঞায় বধদণ্ডের যোগ্য কয়েকজন অপরাধীকে সত্যবানের নিকট আনা হ’লে সত্যবান বললেন, পিতা, অবস্থাবিশেষে ধর্ম অধর্মরূপে এবং অধর্ম ধর্মরূপে গণ্য হয়, কিন্তু বধ কখনই ধর্ম হ’তে পারে না। দ্যুমৎসেন বললেন, দস্যুদের বধ না করলে নানা দোষ ঘটে; দুষ্টের দমনের নিমিত্ত বধদণ্ড আবশ্যক, নতুবা ধর্মরক্ষা হয় না। অন্য উপায় যদি তোমার জানা থাকে তো বল।

 সত্যবান বললেন, ক্ষত্রিয় বৈশ্য ও শূদ্রকে ব্রাহণের অধীন করা কর্তব্য। কেউ যদি ব্রাহ্মণের বাক্য না শোনে তবে ব্রাহ্মণ রাজাকে জানাবেন, তখন রাজা তাকে দণ্ড দেবেন। অপরাধীর কর্ম নীতিশাস্ত্র অনুসারে বিচার না ক’রে বধদণ্ড দেওয়া অন্যায়। একজনকে বধ করলে তার পিতা মাতা পত্নী পুত্র প্রভৃতিরও প্রাণসংশয় হয়। অসাধুলোকেও পরে সচ্চরিত্র হতে পারে, অসাধুরও সাধু সন্তান