পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৬০৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৮২
মহাভারত

হ’তে পারে, অতএব সমূলে সংহার করা অকর্তব্য। অপরাধের শাস্তি অন্য রূপেও হ’তে পারে, যথা ভয়প্রদর্শন, বন্ধন (কারাদণ্ড), বিরূপকরণ প্রভৃতি। অপরাধী যদি পুরোহিতের শরণাগত হয়ে বলে—আর এমন কর্ম করব না, তবে তাকে প্রথম বারে মার্জনা করাই উচিত। মান্যগণ্য লোকের প্রথম অপরাধ ক্ষমার্হ, বার বার অপরাধ দণ্ডনীয়।

 দ্যুমৎসেন বললেন, পূর্বে লোকেরা সুশাস্য সত্যনিষ্ঠ ও মৃদুস্বভাব ছিল, ধিক্‌কারেই তাদের যথেষ্ট দণ্ড হ’ত। তার পর বাগ্‌দণ্ড (তিরস্কার) ও অর্থদণ্ড প্রচলিত হয়, সম্প্রতি বধদণ্ড প্রবর্তিত হয়েছে। এখন অপরাধীকে বধদণ্ড দিয়েও অন্যান্য লোককে দমন করা যায় না। কথিত আছে, দস্যু কারও আত্মীয় নয়, তার সঙ্গে কোনও লোকের সম্বন্ধ নেই। যারা শ্মশান থেকে শবের বস্ত্রাদি এবং ভূতাবিষ্ট লোকের ধন হরণ করে, শপথ করিয়ে তাদের শাসন করা যায় না।

 সত্যবান বললেন, যদি অহিংস উপায়ে অসাধুকে সাধন করা অসাধ্য হয় তবে যজ্ঞ দ্বারা তাদের সংহার করুন। কিন্তু যদি ভয় দেখিয়ে শাসন করা সম্ভবপর হয় তবে ইচ্ছাপূর্বক বধ করা অকর্তব্য। রাজা সদাচারী হ’লে প্রজাও সেইরূপ হয়, শ্রেষ্ঠ লোকে যেমন আচরণ করেন ইতর লোকে তারই অনুসরণ করে। যে রাজা নিজেকে সংযত না ক’রে অন্যকে শাসন করতে যান তাঁকে লোকে উপহাস করে। নিজের বন্ধু ও আত্মীয়কেও কঠোর দণ্ড দিয়ে শাসন করা উচিত। আয়ু শক্তি ও কাল বিচার ক’রে রাজা দণ্ডবিধান করবেন। জীবগণের প্রতি অনুকম্পা ক’রে স্বায়ম্ভুব মনু বলেছেন, যিনি সত্যার্থী (ব্রহ্মলোভেচ্ছু) তিনি মহৎ কর্মের ফল কদাচ ত্যাগ করবেন না।

১৯। বিষয়তৃষ্ণা — বিষ্ণুর মাহাত্ম্য —জ্বরের উৎপত্তি

 যুধিষ্ঠির বললেন, পিতামহ, আমরা অতি পাপী ও নিষ্ঠুর, অর্থের নিমিত্ত আত্মীয়গণকে সংহার করেছি। যাতে অর্থতৃষ্ণা নিবৃত্ত হয় তার উপায় বলুন।

 ভীষ্ম বললেন, তত্ত্বজিজ্ঞাসু মাণ্ডব্যকে বিদেহবাজ জনক এই কথা বলেছিলেন।—আমার কিছুই নেই, তথাপি সুখে জীবনযাপন করি। মিথিলা দগ্ধ হয়ে গেলেও আমার কিছু নষ্ট হয় না। সকল সমৃদ্ধিই দুঃখের কারণ। সমস্ত ঐহিক সুখ এবং স্বর্গীয় সুখে তৃষ্ণাক্ষয়জনিত সুখের ষোড়শাংশের একাংশও