পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৪
মহাভারত

ন জাতু কামঃ কামানামুপভোগেন শাম্যতি।
হবিষা কৃষ্ণবর্ত্মেব ভূয় এবাভিবর্ধতে॥
যৎ পৃথিব্যাং ব্রীহিযবং হিরণ্যং পশবঃ স্ত্রিয়ঃ।
একস্যাপি ন পর্যাপ্তং তস্মাৎ তৃষ্ণাং পরিত্যজেৎ॥

—কাম্য বস্তুর উপভোগে কখনও কামনার শান্তি হয় না, ঘৃতসংযোগে অগ্নির ন্যায় আরও বৃদ্ধি পায়। পৃথিবীতে যত ধান্য যব হিরণ্য পশু ও স্ত্রী আছে তা একজনের পক্ষেও পর্যাপ্ত নয়, অতএব বিষয়তৃষ্ণা ত্যাগ করা উচিত।

 তারপর যযাতি বললেন, পুরু আমি প্রীত হয়েছি, তোমার যৌবন ফিরে নাও, আমার রাজ্যও নাও। তখন ব্রাহ্মণাদি প্রজারা বললেন, মহারাজ, যদু আপনার জ্যেষ্ঠ পুত্র, শুক্রের দৌহিত্র এবং দেবযানীর গর্ভজাত, তাঁর পর আরও তিন পুত্র আছেন; এঁদের অতিক্রম ক’রে কনিষ্ঠকে রাজ্য দিতে চান কেন? যযাতি বললেন, যদু প্রভৃতি আমার আজ্ঞা পালন করে নি, পুরু, করেছে; শুক্রাচার্যের বর অনুসারে আমার অনুগত পুত্রই রাজ্য পাবে। প্রজারা রাজার কথার অনুমোদন করলেন।

 পুরুকে রাজ্য দিয়ে যযাতি বনে বাস করতে লাগলেন এবং কিছুকাল পরে সুরলোকে গেলেন। তিনি ইন্দ্রকে বলেছিলেন, দেবতা মানুষ গন্ধর্ব আর ঋষিদের মধ্যে এমন কেউ নেই যে তপস্যায় আমার সমান। এই আত্মপ্রশংসার ফলে তিনি ইন্দ্রের আজ্ঞায় স্বর্গচ্যুত হলেন। যযাতি ভূতলে না প’ড়ে কিছুকাল অন্তরীক্ষে অষ্টক, প্রতর্দন, বসুমান ও শিবি এই চারজন রাজর্ষির সঙ্গে বিবিধ ধর্মালাপ করলেন। এঁরা যযাতির দৌহিত্র[১]। অনন্তর যযাতি পুনর্বার স্বর্গলোকে গেলেন।

১৪। দুষ্মন্ত-শকুন্তলা

 পুরুর বংশে দুষ্মন্ত[২] নামে এক বীর্যবান রাজা জন্মগ্রহণ করেন, তিনি পৃথিবীর সর্ব প্রদেশ শাসন করতেন। তাঁর দুই পুত্র হয়, লক্ষণার গর্ভে জনমেজয় এবং শকুন্তলার গর্ভে ভরত। ভরতবংশের যশোরাশি বহবিস্তৃত। একদা দুষ্মন্ত প্রভূত সৈন্য ও বাহন নিয়ে গহন বনে মৃগয়া করতে গেলেন। বহু পশু বধ ক’রে তিনি একাকী অপর এক বনে ক্ষুৎপিপাসার্ত ও শ্রান্ত হয়ে উপস্থিত হলেন। এই বন অতি রমণীয়, নানাবিধ কুসুমিত বৃক্ষে সমাকীর্ণ এবং ঝিল্লী ভ্রমর ও কোকিলের


  1. এঁদের কথা উদ্‌যোপর্ব ১৫-পরিচ্ছেদে আছে। সেখানে বসুমানকে বসুমনা বলা হয়েছে।
  2. বা দুষ্যন্ত।