পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৬১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৮৪
মহাভারত

যেমন অল্প পুষ্পের সংস্পর্শে তিলসর্ষপাদি নিজ গন্ধ ত্যাগ করে না, কিন্তু বার বার বহু পুষ্পের সংস্পর্শে নিজ গন্ধ থেকে মুক্ত হয়ে পুষ্পগন্ধে বাসিত হয়, সেইরূপ বহুবার জন্মগ্রহণ ক’রে মানুষ আসক্তিজনিত দোষ থেকে মুক্ত হয়। যাঁর চিত্ত শুদ্ধ হয়েছে তিনি মন দ্বারা অনুসন্ধান ক’রে চৈতন্যস্বরূপ ব্রহ্মের সাক্ষাৎকার এবং অক্ষয় মোক্ষপদ লাভ করেন।

 সনৎকুমারের উপদেশ শোনার পর দানবরাজ বৃত্র যোগস্থ হয়ে প্রাণ বিসর্জন দিয়ে পরমগতি লাভ করলেন।

 যুধিষ্ঠির বললেন, পিতামহ, সনৎকুমার যাঁর কথা বলেছিলেন, এই জনার্দন কৃষ্ণই কি সেই ভগবান? ভীষ্ম বললেন, এই মহাত্মা কেশব সেই পরমপুরুষের অষ্টমাংশ। ইনিই জগতের স্রষ্টা এবং প্রলয়কালে সমস্ত বিনষ্ট হ’লে ইনিই পুনর্বার জগৎ সৃষ্টি করেন; এই বিচিত্র বিশ্ব এঁতেই অবস্থান করছে। ধর্মরাজ, তোমরা শুদ্ধ ও উচ্চ বংশে জন্মেছ, ব্রতপালনও করেছ। মৃত্যুর পরে তোমরা দেবলোকে যাবে, তার পর আবার মর্ত্যলোকে আসবে; পুনর্বার দেবলোকে সুখভোগ ক’রে সিদ্ধগণের পদ লাভ করবে। তোমাদের ভয় নেই, সকলে সুখে কলযাপন কর।

 যুধিষ্ঠির বললেন, পিতামহ, বৃত্র ধার্মিক ও বিষ্ণুভক্ত ছিলেন, তিনি ইন্দ্র কর্তৃক নিহত হলেন কি ক’রে? ভীষ্ম বললেন, যুদ্ধকালে বৃত্রের অতি বিশাল মূর্তি দেখে ভয়ে ইন্দ্রের ঊরুস্তম্ভ হয়েছিল। তিনি বৃত্র কর্তৃক নিপীড়িত হয়ে মূর্ছিত হ’লে বশিষ্ট তাঁর চৈতন্য সম্পাদন করলেন। তার পর ইন্দ্রাদি দেবগণ ও মহর্ষিগণ বৃত্রবধের জন্য মহাদেবের শরণাপন্ন হলেন। মহাদেব ইন্দ্রের দেহে নিজের তেজ এবং বৃত্রের দেহে জ্বররোগ সংক্রামিত ক’রে বললেন, দেবরাজ, এখন তুমি বজ্র দ্বারা তোমার শত্রুকে বধ কর। তখন ইন্দ্র বজ্রপ্রহার ক’রে বৃত্রকে পাতিত করলেন। মহাদেব যখন দক্ষযজ্ঞ নষ্ট করছিলেন তখন তাঁর ঘর্মবিন্দু থেকে একটি পুরুষ উৎপন্ন হয়েছিল, তারই নাম জ্বর। ব্রহ্মার অনুরোধে মহাদেব জ্বরকে নানাপ্রকারে বিভক্ত করেছিলেন। হস্তিমস্তকের তাপ, পর্বতের শিলাজতু, জলের শৈবাল, ভুজঙ্গের নির্মোক, গোজাতির খুররোগ, ভূমির ঊষরতা, পশার দৃষ্টিরোধ, অশ্বের গলরোগ, ময়ূরের শিখোদ্‌ভেদ, কোকিলের নেত্ররোগ, মেষের পিত্তভেদ, শুকের হিক্কা, এবং শার্দূলের শ্রম, এই সকলকে জ্বর বলা হয়।