পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৬১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শান্তিপর্ব
৫৮৫

২০। দক্ষযজ্ঞ

 মহাভারতবক্তা বৈশম্পায়নকে জনমেজয় বললেন, মহর্ষি, বৈবস্বত মন্বন্তরে প্রচেতার পুত্র প্রজাপতি দক্ষের অশ্বমেধ যজ্ঞ কিরূপে নষ্ট এবং পুনর্বার অনুষ্ঠিত হয়েছিল তা আপনি বলুন।

 বৈশম্পায়ন বললেন, পুরাকালে হিমালয় পর্বতের পৃষ্ঠে পবিত্র গঙ্গাদ্বারে দক্ষ প্রজাপতি অশ্বমেধ যজ্ঞের আয়োজন করেছিলেন। সেই যজ্ঞে দেব দানব গন্ধর্ব, আদিত্যগণ বসুগণ রুদ্রগণ প্রভৃতি, ইন্দ্রাদি দেবগণ, এবং ব্রহ্মার সহিত ঋষিগণ ও পিতৃগণ আমন্ত্রিত হয়ে এসেছিলেন। জরায়ুজ অণ্ডজ বেদজ ও উদ্ভিজ্জ এই চতুর্বিধ জীবও সেখানে উপস্থিত হয়েছিল। সমাগত সকলকে দেখে দধীচি মুনি ক্রুদ্ধ হয়ে বললেন, যে অনুষ্ঠানে মহেশ্বর রুদ্র পূজিত হন না তা যজ্ঞও নয় ধর্মও নয়। ঘোর বিপদ আসন্ন হয়েছে, মোহবশে তা কেউ বুঝতে পারছে না। এই ব’লে মহাযোগী দধীচি ধ্যাননেত্রে হরপার্বতী এবং তাঁদের নিকটে উপবিষ্ট নারদকে দেখলেন। দধীচি বুঝলেন, সকলে একযোগে মন্ত্রণা ক’রে মহাদেবকে নিমন্ত্রণ করেন নি। তখন তিনি যজ্ঞস্থান থেকে স’রে গিয়ে বললেন, যে লোক অপূজ্যের পূজা করে এবং পূজ্যের পূজা করে না সে নরহত্যার সমান পাপ করে। আমি সত্য বলছি, এই যজ্ঞে জগৎপতি যজ্ঞভোক্তা পশুপতি আসছেন, তোমরা সকলেই দেখতে পাবে।

 দক্ষ বললেন, এখানে শূলপাণি জটাজূটধারী একাদশ রুদ্র উপস্থিত রয়েছেন, আমি মহেশ্বর রুদ্রকে চিনি না। দধীচি বললেন, তোমরা সকলে মন্ত্রণা ক’রেই তাঁকে বর্জন করেছ। শংকর অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ দেবতা আমি জানি না। তোমার এই বিপুল যজ্ঞ পণ্ড হবে। দক্ষ বললেন, যজ্ঞেশ্বর বিষ্ণুই যজ্ঞভাগ গ্রহণের অধিকারী; আমি এই সুবর্ণ পাত্রে রক্ষিত মন্ত্রপূত হবি তাঁকেই নিবেদন করব।

 এই সময়ে কৈলাসশিখরে দেবী ভগবতী ক্ষুব্ধ হয়ে বললেন, আমি কিরূপ দান ব্রত বা তপস্যা করব যার ফলে আমার পতি যজ্ঞের অর্ধ বা একতৃতীয় ভাগ পেতে পারেন? মহাদেব বললেন, দেবী, তুমি কি আমাকে জান না? তোমার মোহের জন্যই ইন্দ্রাদি দেবগণ এবং ত্রিলোক মোহাবিষ্ট হয়েছে। সকল যজ্ঞে আমারই স্তব করা হয়, আমার উদ্দেশেই সামগান হয়, ব্রহ্মবিৎ ব্রাহ্মণগণ আমারই অর্চনা করেন, অধুর্যুগণ আমাকেই যজ্ঞভাগ দেন। দেবী বললেন, অতি প্রাকৃত (অশিক্ষিত গ্রাম্য) লোকেও স্ত্রীলোকের কাছে নিজের প্রশংসা ও গর্ব করে। মহাদেব বললেন,