পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৬১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৮৬
মহাভারত

আমি আত্মপ্রশংসা করছি না, যজ্ঞের জন্য আমি যা সৃষ্টি করছি দেখ। এই ব’লে মহাদেব তাঁর মুখ থেকে এক ঘোরদর্শন রোমহর্ষকর পুরুষ সৃষ্টি করলেন; তাঁর মুখ অতি ভয়ংকর, শরীর অগ্নিশিখায় ব্যাপ্ত, বহু হস্তে বহু আয়ুধ। বীরভদ্র নামক এই পুরুষ কৃতাঞ্জলি হয়ে বললেন, কি আজ্ঞা করছেন? মহেশ্বর বললেন, দক্ষের যজ্ঞ ধ্বংস কর।

 বীরভদ্র তাঁর রোমকূপ থেকে রৌম্য নামক রূদ্রতুল্য অসংখ্য গণদেবতা সৃষ্টি ক’রে তাদের নিয়ে যজ্ঞস্থলে যাত্রা করলেন। মহেশ্বরীও ভীমরূপা মহাকালীর মূর্তি ধারণ করে বীরভদ্রের অনগমন করলেন। এঁরা যজ্ঞস্থলে উপস্থিত হ’লে দেবগণ ত্রস্ত হলেন, পর্বত বিদীর্ণ ও বসুন্ধরা কম্পিত হ’ল, বায়ু ঘূর্ণিত এবং সমূদ্র বিক্ষুব্ধ হ’তে লাগল, সমস্ত জগৎ তিমিরাচ্ছন্ন হ’ল। বীরভদ্রের অনুচরগণ যজ্ঞের সমস্ত উপকরণ চূর্ণ উৎপাটিত ও দগ্ধ ক’রে সকলকে প্রহার করতে লাগল। তারা অন্ন মাংস পায়স প্রভৃতি খেয়ে ও নষ্ট ক’রে, দেবসৈন্যগণকে ভয় দেখিয়ে হতবুদ্ধি ক’রে, এবং সুরনারীদের ছুড়ে ফেলে দিয়ে খেলা করতে লাগল। রুদ্রকর্মা বীরভদ্র যজ্ঞস্থল দগ্ধ এবং যজ্ঞের[১] শিরশ্ছেদন ক’রে ঘোর সিংহনাদ করলেন।

 ব্রহ্মাদি দেবগণ ও প্রজাপতি দক্ষ কৃতাঞ্জলি হয়ে বললেন, আপনি কে? বীরভদ্র উত্তর দিলেন, আমি রুদ্র নই, ইনিও দেবী ভগবতী নন; আমরা ভোজনের জন্য বা তোমাদের দেখতে এখানে আসি নি, এই যজ্ঞ নষ্ট করতেই এসেছি। ভগবতীকে ক্ষুব্ধ দেখে মহাদেব ক্রুদ্ধ হয়েছেন। আমি রুদ্রকোপে উৎপন্ন বীরভদ্র, ইনি ভগতীর কোপ হ’তে বিনিঃসৃত ভদ্রকালী। দক্ষ, তুমি দেবদেব উমাপতির শরণ নাও; অন্য দেবতার নিকট বরলাভ অপেক্ষা মহাদেবের ক্রোধে পড়াও ভাল।

 দক্ষ প্রণিপাত ক’রে মহেশ্বরের স্তব করতে লাগলেন। তখন সহস্র সূর্যের ন্যায় দীপ্তিমান মহাদেব অগ্নিকুণ্ড থেকে উত্থিত হয়ে সহাস্যমুখে দক্ষকে বললেন, বল, কি চাও। দক্ষ ভয়ে আকুল হয়ে সাশ্রুনয়নে বললেন, ভগবান, এই যজ্ঞের জন্য বহু যত্নে আমি যেসকল উপকরণ সংগ্রহ করেছিলাম তা দগ্ধ ভক্ষিত ও নাশিত হয়েছে; যদি প্রসন্ন হয়ে থাকেন তবে এই বর দিন আমার যজ্ঞ যেন নিষ্ফল না হয়। ভগবান বিরূপাক্ষ বললেন, তথাস্তু। তখন দক্ষ নতজানু হয়ে অষ্টোত্তর সহস্র নাম পাঠ ক’রে ভগবান কৃষভধ্বজের স্তব করলেন।

  1. সৌপ্তিকপর্ব ৭-পরিচ্ছেদে আছে, যজ্ঞ মৃগরূপে পালিয়েছিলেন।