পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৬১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শান্তিপর্ব
৫৮৭

২১। আসক্তিত্যাগ—শুক্রের ইতিহাস

 যুধিষ্ঠির বললেন, পিতামহ, আমার ন্যায় রাজারা কিরূপে আসক্তি থেকে মুক্ত হ’তে পারেন তা বলুন। ভীষ্ম বললেন, সগরের প্রশ্নের উত্তরে অরিষ্টনেমি যা বলেছিলেন শোন।—মোক্ষসুখই প্রকৃত সুখ, স্নেহপাশে বদ্ধ মূঢ় লোকে তা বুঝতে পারে না। যখন দেখবে যে পুত্রেরা যৌবন পেয়েছে এবং জীবিকানির্বাহে সমর্থ হয়েছে তখন তাদের বিবাহ দেবে, এবং নিজে সংসারবন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে যথাসুখে বিচরণ করবে। পুত্রবৎসলা বৃদ্ধা ভার্যাকেও গৃহে রেখে মোক্ষের অন্বেষণে যত্নবান হবে। পুত্র থাকুক বা না থাকুক, প্রথমে যথাবিধি ইন্দ্রিয়সুখ ভোগ করার পর সংসার ত্যাগ ক’রে নিস্পৃহ হয়ে বিচরণ করবে। যদি মোক্ষের অভিলাষ থাকে তবে আমার অভাবে পরিবারবর্গ কি করে জীবিকানির্বাহ করবে — এমন চিন্তা করবে না। জীব স্বয়ং উৎপন্ন হয়, স্বয়ং বর্ধিত হয়, এবং স্বয়ং সুখদুঃখ ভোগ ক’রে পরিশেষে মৃত্যুর কবলে পড়ে! সকল জীবই পূর্বজন্মের কর্ম অনুসারে বিধাতা কর্তৃক বিহিত ভক্ষ্য লাভ করে। মানুষ মৃৎপিণ্ডের তুল্য এবং সর্বদা পরতন্ত্র, তার পক্ষে স্বজনপোষণের চিন্তা করা বৃথা। মরণের পর তুমি স্বজনের সুখদুঃখ কিছুই জানতে পারবে না; তোমার জীবদ্দশায় এবং তোমার মরণের পর তারা স্বকর্ম অনুসারে সুখদুঃখ ভোগ করবে, এই বুঝে তুমি নিজের হিতের চেষ্টা কর। জঠরাগ্লিই ভোক্তা এবং ভোজ্য অন্ন সোম স্বরূপ এই জ্ঞান যাঁর হয়, এবং যিনি নিজেকে এই দুই হ’তে স্বতন্ত্র মনে করেন, যিনি সুখদুঃখে লাভালাভে জয়পরাজয়ে সমবুদ্ধি, যিনি জানেন যে ইহলোকে অর্থ দুর্লভ এবং ক্লেশই সুলভ, তিনিই মুক্তিলাভ করেন।


 যুধিষ্ঠির বললেন, পিতামহ, দেবর্ষি উশনা (শত্রু) কেন দেবতাদের বিপক্ষে থেকে অসুরদের প্রিয়সাধন করতেন, তাঁর শুক্র নাম কেন হ’ল, তিনি (গ্রহরূপে) আকাশের মধ্যদেশে যেতে পারেন না কেন, এইসকল বিবৃত ক’রে আপনি আমার কৌতূহল নিবৃত্ত করুন। ভীষ্ম বললেন, বিষ্ণু শুক্রের মাতা[১] কে বধ করেছিলেন সেজন্য শুক্র দেবদ্বেষী হন। একদিন তিনি যোগবলে কুবেরকে বন্ধ ক’রে তাঁর সমস্ত

  1. ভৃগুপত্নী। দেবগণের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাবার জন্য অসুরগণ এঁর আশ্রমে শরণ নিয়েছিলেন। দেবতারা সেখানে প্রবেশ করতে পারেন নি, এজন্য বিষ্ণু তাঁর চক্র দিয়ে ভৃগুপত্নীর শিরশ্ছেদ করেন।