পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৬১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৮৮
মহাভারত

ধন হরণ করলেন। কুবেরের অভিযোগ শুনে মহাদেব শূলহস্তে শুক্রকে মারতে এলেন, তখন শুক্র শূলের অগ্রভাগে আশ্রয় নিলেন। মহাদেব শুক্রকে ধ’রে মুখে পুরে গ্রাস ক’রে ফেললেন। তার পর তিনি মহাহ্রদের জলমধ্যে দশ কোটি বৎসর তপস্যা করলেন, তাঁর জঠরে থাকায় শুক্রেরও উৎকর্ষলাভ হ’ল। মহাদেব জল থেকে উঠলে শুক্র বহির্গত হবার জন্য বার বার প্রার্থনা করলেন, অবশেষে মহাদেব বললেন, তুমি আমার শিশ্ন দিয়ে নির্গত হও। শিশ্নপথে নির্গত হওয়ায় উশনার নাম শুক্র হ’ল এবং তিনি আকাশের মধ্যস্থলে যেতে অসমর্থ হলেন। শুক্রকে দেখে মহাদেব ক্রুদ্ধ হয়ে তাঁর শূল উদ্যত করলেন। তখন ভগবতী বললেন, শুক্র এখন আমার পুত্র হ’ল, তোমার উদর থেকে যে বহির্গত হয়েছে সে বিনষ্ট হ’তে পারে না। মহাদেব সহাস্যে বললেন, শুক্র যেখানে ইচ্ছা যেতে পারেন।

২২। সুলভা-জনক সংবাদ

 যুধিষ্ঠিরের প্রশ্নের উত্তরে ভীষ্ম সাংখ্য যোগ গৃহস্থাশ্রম তপস্যা প্রভৃতি সম্বন্ধে বহু উপদেশ দিয়ে সুলভা ও জনকের এই প্রাচীন ইতিহাস বললেন। — সত্যযুগে মিথিলায় জনক[১] নামে এক রাজা ছিলেন, তাঁর অন্য নাম ধর্মধ্বজ। তিনি সন্ন্যাসধর্ম মোক্ষশাস্ত্র ও দণ্ডনীতিতে অভিজ্ঞ ছিলেন এবং জিতেন্দ্রিয় হয়ে রাজ্যশাসন করতেন। সুলভা নামে এক ভিক্ষুকী (সন্ন্যাসিনী) রাজর্ষি জনকের খ্যাতি শুনে তাঁকে পরীক্ষা করবার সংকল্প করলেন এবং যোগবলে মনোহর রূপ ধারণ ক’রে মিথিলার রাজসভায় উপস্থিত হলেন। তাঁর সৌন্দর্য দেখে রাজা বিস্মিত হলেন এবং পাদ্য অর্ঘ্য আসন ভোজ্য প্রভৃতি দিয়ে সংবর্ধনা করলেন। তার পর সুলভা যোগবলে নিজের সত্ত্ব বুদ্ধি ও চক্ষু জনকের সত্ত্ব বুদ্ধি ও চক্ষুতে সন্নিবিষ্ট করলেন[২]

 সুলভার অভিপ্রায় বুঝতে পেরে জনক তাঁকে নিজের মনোমধ্যে গ্রহণ ক’রে সহাস্যে বললেন, দেবী, তুমি কার কন্যা, কোথা থেকে এসেছ? তোমার সম্মানের জন্য আমি নিজের তত্ত্বজ্ঞানলাভের বিষয় বলছি শোন। বৃদ্ধ মহাত্মা পঞ্চশিখ আমার গুরু, তাঁর কাছেই আমি সাংখ্য যোগ ও রাজধর্ম এই ত্রিবিধ মোক্ষতত্ত্ব শিখেছি। আসক্তি মোহ ও সুখদুঃখাদি দ্বন্দ্ব থেকে মুক্ত হয়ে আমি পরমবুদ্ধি লাভ করেছি। যদি একজন আমার দক্ষিণ বাহুতে চন্দন লেপন করে এবং অপর একজন আমার বাম


  1. মিথিলার সকল রাজাকেই জনক বলা হ’ত।
  2. অর্থাৎ সুলভা তাঁর সূক্ষ্মশরীর দ্বারা জনকের দেহে ভর করলেন।