পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৬১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৯০
মহাভারত

২৩। ব্যাসপুত্র শুক—নারদের উপদেশ

 যুধিষ্ঠির বললেন, পিতামহ, ব্যাসের পুত্র ধর্মাত্মা শুক কিপ্রকারে জন্মগ্রহণ ও সিদ্ধিলাভ করেছিলেন তা বলুন। ভীষ্ম বললেন, পুরাকালে মহাদেব ও শৈলরাজসূতা ভবানী ভীমদর্শন ভূতগণে পরিবেষ্টিত হয়ে সুমেরুর শঙ্গে বিহার করতেন। ব্যাসদেব পুত্রকামনায় সেখানে তপস্যায় রত হয়ে মহাদেবের আরাধনা করতে লাগলেন। মহেশ্বর প্রসন্ন হয়ে বললেন, দ্বৈপায়ন, তুমি অগ্নি বায়ু জল ভূমি ও আকাশের ন্যায় পবিত্র পুত্র লাভ করবে, সে ব্রহ্মপরায়ণ হয়ে নিজ তেজে ত্রিলোক আবরণ ক’রে যশম্বী হবে।

 বরলাভ ক’রে ব্যাস অগ্নি উৎপাদনের জন্য দুই খণ্ড অরণি কাঠ নিয়ে মন্থন করতে লাগলেন। সেই সময়ে ঘৃতাচী অপ্সরাকে দেখে ব্যাস কামাবিষ্ট হলেন। তখন ঘৃতাচী শুক পক্ষিণীর রূপ ধারণ করলেন। ব্যাস মনঃসংযম করতে পারলেন না, তাঁর শুত্রু অরণিকাষ্ঠের উপর স্থলিত হ’ল; তথাপি তিনি মন্থন করতে লাগলেন। সেই অরণিতে শুকদেব জন্মগ্রহণ করলেন। শুক্রের মন্থনে উৎপন্ন এজন্য তাঁর নাম শুক হ’ল। তখন গঙ্গা মূর্তিমতী হয়ে সামের শিখরে এসে শিশুকে স্নান করালেন, শুকের জন্য আকাশ থেকে ব্রহ্মচারীর ধারণীয় দণ্ড ও কৃষ্ণাজিন পতিত হ’ল এবং দিব্য বাদ্যধ্বনি ও গন্ধর্ব-অপ্সরাদের নৃত্যগীত হ’তে লাগল। মহাদেব ভগবতীর সঙ্গে এসে সদ্যোজাত মুনিপুত্রের উপনয়ন সংস্কার করলেন। দেবরাজ ইন্দ্র তাঁকে কমণ্ডলু ও দিব্যবস্ত্র দিলেন। বহু সহস্র হংস, শতপত্র (কাঠঠোকরা), সারস, শুক, চাষ (নীলকণ্ঠ) প্রভৃতি শুভসচক পক্ষী বালককে প্রদক্ষিণ করতে লাগল। জন্মমাত্র সমস্ত বেদ শুকের আয়ত্ত হ’ল। তিনি বৃহস্পতির নিকট সকল শাস্ত্র অধ্যয়ন করলেন।

 শুকদেব তাঁর পিতাকে বললেন, আপনি মোক্ষধর্মের উপদেশ দিন। ব্যাস তাঁকে নিখিল যোগ ও কাপিল (সাংখ্য) শাস্ত্র শিখিয়ে বললেন, তুমি মিথিলায় জনক রাজার কাছে যাও, তিনি তোমাকে মোক্ষধর্মের উপদেশ দেবেন। শুকদেব সুমেরুশৃঙ্গ থেকে যাত্রা করে ইলাবৃতবর্ষ হরিবর্ষ ও হৈমবতবর্ষ অতিক্রম করলেন এবং চীন হূণ প্রভৃতি দেশ দেখে ভারতবর্ষে আর্যাবর্তে এলেন। তার পর মিথিলার রাজভবনে উপস্থিত হয়ে দুই কক্ষা (মহল) অতিক্রম করে তিনি অমরাবতীতুল্য তৃতীয় কক্ষায় প্রবেশ করলেন। সেখানে পঞ্চাশ জন রূপবতী বারাঙ্গনা তাঁকে পাদ অর্ঘ্য দিয়ে পূজা ক’রে সুস্বাদু অন্ন নিবেদন করলে। জিতেন্দ্রিয় শুকদেব সেইসকল নারীগণে পরিবৃত হয়ে নির্বিকারচিত্তে এক দিবারাত্র যাপন করলেন।