পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৬১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৯২
মহাভারত

ব্যাস তাঁর পুত্রকে নিবারণ করলেন। শুকদেব তাঁর পিতাকে বললেন, এই বায়ু কোথা থেকে এল? আপনি বায়ুর বিষয় বলুন। ব্যাসদেব তখন সমান উদান ব্যান অপান ও প্রাণ এই পাঁচ বায়ুর ক্রিয়া বিবৃত ক’রে তাদের অন্য পাঁচ নাম বললেন—সংবহ উদ্‌বহ বিবহ আবহ ও প্রবহ। তিনি আরও দুই বায়ুর নাম বললেন—পরিবহ ও পরাবহ। তার পর তিনি বললেন, এই সকল বায়ু দ্বারাই মেঘের সঞ্চরণ, বিদ্যুৎপ্রকাশ, সমুদ্র হ’তে জলশোষণ, মেঘের উৎপত্তি, বারিবর্ষণ, ঝঞ্ঝা প্রভৃতি সাধিত হয়।

 বায়ুবেেগ শান্ত হ’লে ব্যাসদেব তাঁর পুত্রকে আবার বেদপাঠের অনুমতি দিয়ে গঙ্গায় স্নান করতে গেলেন। শুকদেব নারদকে বললেন, দেবর্ষি, ইহলোকে যা হিতকর আপনি তার সম্বন্ধে উপদেশ দিন। নারদ বললেন, পুরাকালে ভগবান সনৎকুমার এই বাক্য বলেছিলেন।—

নাস্তি বিদ্যাসমং চক্ষুর্নাস্তি সত্যসমং তপঃ।
নাস্তি রাগসমং দুঃখং নাস্তি ত্যাগসমং সুখম্॥
নিত্যং ক্রোধাৎ তপো রক্ষেচ্ছ্রিয়ং রক্ষেচ্চ মৎসরাৎ।
বিদ্যাং মানাপমানাভ্যামাত্মানং তু প্রমাদতঃ॥
আনৃশংসাং পরো ধর্মঃ ক্ষমা চ পরমং বলম্।
আত্মজ্ঞানং পরং জ্ঞানং ন সত্যাদ্ বিদ্যতে পরম্॥
সত্যস্য বচনং শ্রেয়ঃ সত্যাদপি হিতং বদেৎ।
যদ্‌ভূতহিতমত্যন্তমেতৎ সত্যং মতো মম॥

—বিদ্যার তুল্য চক্ষু নেই, সত্যের তুল্য তপস্যা নেই, আসক্তির তুল্য দুঃখ নেই, ত্যাগের তুল্য সুখ নেই। ক্রোধ হ’তে তপস্যাকে, পরশ্রীকাতরতা হ’তে নিজের শ্রীকে, মান-অপমান হ’তে বিদ্যাকে এবং প্রমাদ হ’তে আত্মাকে সর্বদা রক্ষা করবে। অনৃশংসতাই পরম ধর্ম, ক্ষমাই পরম বল, আত্মজ্ঞানই পরম জ্ঞান; সত্য অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ কিছুই নেই। সত্যবাক্য শ্রেয়, কিন্তু সত্য অপেক্ষাও হিতবাক্য বলবে; যা প্রাণিগণের অত্যন্ত হিতকর তাই আমার মতে সত্য।—

ন হিংস্যাৎ সর্বভূতানি মৈত্রায়ণগতশ্চরেৎ।
নেদং জন্ম সমাসাদ্য বৈরং কুর্বীত কেনচিৎ॥
মৃতং বা যদি বা নষ্টং যোঽতীতমনুশোচতি।
দুঃখেন লভতে দুঃখং দ্বাবনর্থৌ প্রপদ্যতে॥
ভৈষজ্যমেতদ্ দঃখস্য যদেতন্নানুচিন্তয়েৎ।
চিন্ত্যমানং হি ন ব্যেতি ভূয়শ্চাপি প্রবর্ধতে॥