পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আদিপর্ব
৩৫

রবে মুখরিত। রাজা মালিনী নদীর তীরে কণ্ব মুনির মনোহর আশ্রম দেখতে পেলেন, সেখানে হিংস্র জন্তুরাও শান্তভাবে বিচরণ করছে।

 অনুচরদের অপেক্ষা করতে বলে দুষ্মন্ত আশ্রমে প্রবেশ করে দেখলেন, ব্রাহ্মণরা বেদপাঠ এবং বহুবিধ শাস্ত্রের আলোচনা করছেন। মহর্ষি কণ্বের দেখা না পেয়ে তাঁর কুটীরের নিকটে এসে দুষ্মন্ত উচ্চকণ্ঠে বললেন, এখানে কে আছেন? রাজার বাক্য শুনে লক্ষ্মীর ন্যায় রূপবতী তাপসবেশধারিণী একটি কন্যা বাইরে এলেন এবং দুষ্মন্তকে স্বাগত জানিয়ে আসন পাদ্য অর্ঘ্য দিয়ে সংবর্ধনা করলেন। তারপর মধর স্বরে কুশলপ্রশ্ন ক’রে বললেন, কি প্রয়োজন বলুন, আমার পিতা ফল আহরণ করতে গেছেন, একটু অপেক্ষা করুন, তিনি শীঘ্রই আসবেন।

 এই সুনিতম্বিনী চারুহাসিনী রূপযৌবনবতী কন্যাকে দুষ্মন্ত বললেন, আপনি কে, কার কন্যা, এখানে কোথা থেকে এলেন? কন্যা উত্তর দিলেন, মহারাজ, আমি ভগবান কণ্বের দুহিতা। রাজা বললেন, তিনি তো ঊর্দ্ধরেতা তপস্বী, আপনি তাঁর কন্যা কিরূপে হলেন? কন্যা বললেন, ভগবান কণ্ব এক ঋষিকে আমার জন্মবৃত্তান্ত বলেছিলেন, আমি তা শুনেছিলাম। সেই বিবরণ আপনাকে বলছি, শুনুন।—

 পূর্বকালে বিশ্বামিত্র ঘোর তপস্যা করছেন দেখে ইন্দ্র ভীত হয়ে মেনকাকে পাঠিয়ে দেন। মেনকা বিশ্বামিত্রের কাছে এসে তাঁকে অভিবাদন ক’রে নৃত্য করতে লাগলেন, সেই সময়ে তাঁর সূক্ষ্ম শুভ্র বসন বায়ু হরণ করলেন। সর্বাঙ্গসুন্দরী বিবস্ত্রা মেনকাকে দেখে মুগ্ধ হয়ে বিশ্বামিত্র তাঁর সঙ্গে মিলিত হলেন। মেনকার উদ্দেশ্য সিদ্ধ হ’ল, তিনি গর্ভবতী হলেন এবং একটি কন্যা প্রসব ক’রেই তাকে মালিনী নদীর তীরে ফেলে ইন্দ্রসভায় চ’লে গেলেন। সিংহব্যাঘ্রসমাকুল জনহীন বনে সেই শিশুকে পক্ষীরা রক্ষা করতে লাগল। মহর্ষি কণ্ব স্নান করতে গিয়ে শিশুকে দেখতে পেলেন এবং গৃহে এনে তাকে দুহিতার ন্যায় পালন করলেন। শকুন্ত অর্থাৎ পক্ষী কর্তৃক রক্ষিত সেজন্য তার নাম শকুন্তলা হ’ল। আমিই সেই শকুন্তলা। শরীরদাতা প্রাণদাতা ও অন্নদাতাকে ধর্মশাস্ত্রে পিতা বলা হয়। মহারাজ, আমাকে মহর্ষি কণ্বের দুহিতা ব’লে জানবেন।

 দুষ্মন্ত বললেন, কল্যাণী, তোমার কথায় জানলাম তুমি রাজপুত্রী, তুমি আমার ভার্যা হও। এই সুবর্ণমালা, বিবিধ বস্ত্র, কুণ্ডল, নানাদেশজাত মণিরত্ন, বক্ষের অলংকার এবং মৃগচর্ম তুমি নাও, আমার সমস্ত রাজ্য তোমারই, তুমি আমার ভার্যা হও। তুমি গান্ধর্বরীতিতে আমাকে বিবাহ কর, এইরূপ বিবাহই শ্রেষ্ঠ।