পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৬২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৯৪
মহাভারত

ক’রে ‘ভোঃ’ শব্দে উত্তর দিলেন। তদবধি গিরিগহ্বর প্রভৃতিতে কিছু বললে তার প্রতিধ্বনি শোনা যায়।

 শুকদেব অন্তর্হিত হ’লে ব্যাসদেব পর্বতশিখরে ব’সে তাঁর পুত্রের বিষয় চিন্তা করতে লাগলেন। সেই সময়ে মন্দাকিনীতীরে যে অপ্সরারা নগ্ন হয়ে ক্রীড়া করছিল তারা ব্যাসকে দেখে ত্রস্ত ও লজ্জিত হ’ল, কেউ জলমধ্যে লীন হয়ে রইল, কেউ গুল্মের অন্তরালে গেল, কেউ পরিধেয় বস্ত্র গ্রহণে ত্বরান্বিত হ’ল। এই দেখে পুত্রের অনাসক্তি এবং নিজের আসক্তি বুঝে ব্যাসদেব প্রীত[১] ও লজ্জিত হলেন। অনন্তর পিনাকপাণি ভগবান শংকর আবির্ভূত হয়ে পুত্রবিরহকাতর ব্যাসদেবকে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন, তোমার পুত্রের ও তোমার কীর্তি চিরকাল অক্ষয় হয়ে থাকবে। মহামুনি, তুমি আমার প্রসাদে সর্বদা সর্বত্র নিজ পুত্রের ছায়া দেখতে পাবে।

২৪। উঞ্ছব্রতধারীর উপাখ্যান

 যুধিষ্ঠির বললেন, পিতামহ, আপনি মোক্ষধর্ম বিবৃত করেছেন, এখন আশ্রমবাসীদের ধর্ম সম্বন্ধে বলুন। ভীষ্ম বললেন, সকল আশ্রমের জন্যই স্বর্গদায়ক ও মোক্ষফলপ্রদ ধর্ম বিহিত আছে। ধর্মের বহু দ্বার, ধর্মানুষ্ঠান কখনও বিফল হয় না। যাঁর যে ধর্মে নিষ্ঠা, সেই ধর্মই তিনি অবলম্বন করেন। পুরাকালে দেবর্ষি নারদ ইন্দ্রকে যে উপাখ্যান বলেছিলেন তা শোন।—

 গঙ্গার দক্ষিণ তীরে মহাপদ্ম নগরে এক ধার্মিক জিতেন্দ্রিয় ব্রাহ্মণ বাস করতেন, তাঁর অনেক পুত্র ছিল। তাঁর এই ভাবনা হ’ল—বেদোক্ত ধর্ম, শাস্ত্রোক্ত ধর্ম, এবং শিষ্টাচারসম্মত ধর্ম, এই তিনের মধ্যে কোনটি তাঁর পক্ষে শ্রেয়। একদিন তাঁর গৃহে একজন ব্রাহ্মণ অতিথি এলে তিনি যথাবিধি সৎকার ক’রে নিজের সংশয়ের বিষয় জানালেন। অতিথি বললেন, এ সম্বন্ধে আমিও কিছু স্থির করতে পারি নি। কেউ মোক্ষের প্রশংসা করেন, কেউ বা যজ্ঞ, বানপ্রস্থ, গার্হস্থ্য, রাজধর্ম, গুরু নির্দিষ্ট ধর্ম, বাক্‌সংযম, পিতামাতার সেবা, অহিংসা, সত্যকথন, সম্মুখযুদ্ধে মরণ, অথবা উঞ্ছবৃত্তিকেই শ্রেষ্ঠ মার্গ মনে করেন। আমার গুরুর নিকট শুনেছি, নৈমিষক্ষেত্রে গোমতীতীরে নাগাহ্বয় (নাগ নামক) নগর আছে, সেখানে পদ্মনাভ নামে এক মহানাগ বাস করেন। তাঁর কাছে গেলে তিনি তোমার সংশয় ভঞ্জন করবেন।

  1. ব্যাস জানতেন যে অপ্সরারা জিতেন্দ্রিয় নির্বিকার শুকের সমক্ষে লজ্জিত হ’ত না।