পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৬২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অনুশাসনপর্ব
৫৯৯

২। সুদর্শন-ওঘবতীর অতিথিসৎকার

 যুধিষ্ঠির বললেন, পিতামহ, গৃহস্থ ধর্মপরায়ণ হয়ে কি ক’রে মৃত্যুকে জয় করতে পারে তা বলুন। ভীষ্ম বললেন, আমি এক ইতিহাস বলছি শোন।—মাহিষ্মতী নগরীতে ইক্ষ্বাকুবংশীয় দুর্যোধন নামে এক ধর্মাত্মা রাজা ছিলেন। তাঁর ঔরসে দেবনদী নর্মদার গর্ভে সুদর্শনা নামে এক পরমরূপবতী কন্যা জন্মগ্রহণ করেন। ভগবান অগ্নিদেবের অভিলাষ জেনে রাজা তাঁকে কন্যাদান করলেন এবং শুল্কস্বরূপ এই বর পেলেন যে অগ্নি সর্বদা মাহিষ্মতীতে অধিষ্ঠিত থাকবেন। সহদেব যখন দক্ষিণ দিক জয় করতে গিয়েছিলেন তখন তিনি সেই অগ্নি দেখেছিলেন[১]। অগ্নিদেবের ঔরসে সুদর্শনার এক পুত্র হ’ল, তাঁর নাম সুদর্শন। সুদর্শনের সঙ্গে নৃগ রাজার পিতামহ ওঘবানের কন্যা ওঘবতীর বিবাহ হ’ল।

 সুদর্শন পত্নীর সঙ্গে কুরুক্ষেত্রে বাস করতে লাগলেন এবং প্রতিজ্ঞা করলেন যে গৃহস্থাশ্রমে থেকেই মৃত্যুকে জয় করবেন। তিনি ওঘবতীকে বললেন, তুমি অতিথিকে সর্বপ্রকারে তুষ্ট রাখবে, এমন কি প্রয়োজন হ’লে নির্বিচারে নিজেকেও দান করবে। আমি গৃহে থাকি বা না থাকি তুমি কখনও অতিথিসেবায় অবহেলা করবে না। কল্যাণী, অতিথি অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ কেউ নেই। ওঘবতী তাঁর মস্তকে অঞ্জলি রেখে বললেন, তোমার আদেশ অবশ্যই পালন করব।

 একদিন সুদর্শন কাষ্ঠ সংগ্রহ করতে গেলে স্বয়ং ধর্ম ব্রাহ্মণের বেশে ওঘবতীর কাছে এসে বললেন, আমি তোমার অতিথি, যদি গার্হস্থ্যধর্মে তোমার আস্থা থাকে তবে আমার সৎকার কর। ওঘবতী আসন ও পাদ্য দিয়ে বললেন, বিপ্র, আপনার কি প্রয়োজন? ব্রাহ্মণরূপী ধর্ম বললেন, তোমাকেই আমার প্রয়োজন। ওঘবতী অন্যান্য অভীষ্ট বস্তুর প্রলোভন দেখালেন, কিন্তু ব্রাহ্মণ তাতে সম্মত হলেন না। তখন তিনি পতির আজ্ঞা স্মরণ করে সলজ্জভাবে বললেন, তাই হ’ক, এবং ব্রাহ্মণের সঙ্গে সহাস্যে অন্য গৃহে গেলেন।

 সুদর্শন ফিরে এসে পত্নীকে দেখতে না পেয়ে বার বার ডাকতে লাগলেন। ওঘবতী তখন ব্রাহ্মণের বাহুপাশে বদ্ধ ছিলেন এবং নিজেকে উচ্ছিষ্ট মনে ক’রে পতির আহ্বানের উত্তর দিলেন না। সুদর্শন আবার বললেন, আমার সাধ্বী পতিব্রতা সরলা পত্নী কোথায় গেল, তার চেয়ে শ্রেষ্ঠ সম্পদ আমার কিছুই নেই। তখন কুটীরের

  1. সভাপর্ব ৬-পরিচ্ছেদ দ্রষ্টব্য।