পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৬২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬০০
মহাভারত

ভিতর থেকে ব্রাহ্মণ বললেন, অগ্নিপুত্র সুদর্শন, আমি অতিথি ব্রাহ্মণ তোমার গৃহে এসেছি, তোমার ভার্যা আমার প্রার্থনা পূরণ করছেন; তোমার যা উচিত মনে হয় কর।

 সুদর্শনের পশ্চাতে লৌহমুদ্‌গরধারী মৃত্যু অদৃশ্যভাবে অপেক্ষা করছিলেন; তিনি স্থির করেছিলেন, সুদর্শন যদি অতিথিসৎকারব্রত পালন না করেন তবে তাঁকে বধ করবেন। অতিথির কথা শুনে সুদর্শন বিস্মিত হলেন, এবং ঈর্ষা ও ক্রোধ ত্যাগ ক’রে বললেন, দ্বিজশ্রেষ্ঠ, আপনার সুরত সম্পন্ন হ’ক, আমার প্রাণ পত্নী এবং আর যা কিছু আছে সবই আমি অতিথিকে দান করতে পারি। আমি সত্য কথা বলেছি, এই সত্যদ্বারা দেবতারা আমাকে পালন করুন অথবা দহন করুন। তখন সেই অতিথি ব্রাহ্মণ কুটীর থেকে বেরিয়ে এসে ত্রিলোক অনুনাদিত ক’রে বললেন, আমি ধর্ম, তোমাকে পরীক্ষা করবার জন্য এসেছি। মৃত্যু সর্বদা তোমার রন্ধ্র অনুসন্ধান করছিলেন, তাঁকে তুমি জয় করেছ। নরশ্রেষ্ঠ, ত্রিলোকে এমন কেউ নেই যে তোমার পতিব্রতা সাধ্বী পত্নীর প্রতি দৃষ্টিপাত করতে পারে। ইনি তোমার এবং নিজের গুণে রক্ষিতা, ইনি যা বলবেন তার অন্যথা হবে না। এই ব্রহ্মবাদিনী নিজ তপস্যার প্রভাবে অর্ধশরীর দ্বারা ওঘবতী নদী হয়ে লোকপাবন করবেন এবং অর্ধশরীরে তোমার অনুগমন করবেন। তুমিও সশরীরে এঁর সঙ্গে শাশ্বত সনাতন লোক লাভ করবে। তুমি মৃত্যুকে পরাজিত করেছ, বীর্যবলে পঞ্চভূতকে অতিক্রম করেছ, গৃহস্থ ধর্ম দ্বারা কাম ক্রোধ জয় করেছ। অনন্তর দেবরাজ ইন্দ্র শুক্লবর্ণ সহস্র অশ্ব যোজিত রথে সুদর্শন ও ওঘবতীকে তুলে নিয়ে প্রস্থান করলেন।

 ভীষ্ম যুধিষ্ঠিরকে বললেন, গৃহস্থের পক্ষে অতিথিই পরমদেবতা, অতিথি পূজিত হ’লে যে শুভচিন্তা করেন তার ফল শত যজ্ঞেরও অধিক। সাধুস্বভাব অতিথি যদি সমাদর না পান তবে তিনি নিজের পাপ গৃহস্থকে দিয়ে এবং তার পুণ্য নিয়ে প্রস্থান করেন। বৎস, গৃহস্থ সুদর্শন যে প্রকারে মৃত্যুকে পরাস্ত করেছিলেন তার পুণ্যময় আখ্যান তোমাকে বললাম।

৩। কৃতজ্ঞ শুক—দৈব ও পুরুষকার—ভঙ্গাস্বনের স্ত্রীভাব

 যুধিষ্ঠির বললেন, পিতামহ, আপনি অনুকম্পা-ধর্মের ও ভক্তজনের গুণবর্ণনা করুন। ভীষ্ম বললেন, আমি একটি উপাখ্যান বলছি শোন।—কাশীরাজ্যের অরণ্যে এক ব্যাধ মৃগবধের জন্য বিষলিপ্ত বাণ নিক্ষেপ করেছিল, কিন্তু লক্ষ্যভ্রষ্ট