পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৬৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অনুশাসনপর্ব
৬০৩

অবস্থার পুত্রদের চেয়ে প্রিয় হ’ল কেন? ভঙ্গাস্বন বললেন, দেবরাজ, পুরুষ অপেক্ষা স্ত্রীর স্নেহই অধিক। ইন্দ্র প্রীত হয়ে বললেন, সত্যবাদিনী, আমার বরে তোমার সকল পুত্রই জীবিত হ’ক। এখন তুমি পুরুষত্ব বা স্ত্রীত্ব কি চাও বল। রাজা বললেন, আমি স্ত্রীরূপেই থাকতে চাই। ইন্দ্র কারণ জিজ্ঞাসা করলে রাজা বললেন দেবরাজ, স্ত্রীপুরুষের সংযোগকালে স্ত্রীরই অধিক সুখ হয়, আমি স্ত্রীভাবেই তুষ্ট আছি। ইন্দ্র ‘তাই হ’ক’ ব’লে চলে গেলেন।

৪। হরপার্বতীর নিকট কৃষ্ণের বরলাভ

 যুধিষ্ঠির বললেন, পিতামহ, আপনি জগৎপতি মহেশ্বর শম্ভুর নামসকল বলন। ভীষ্ম বললেন, তাঁর নামকীর্তন আমার সাধ্য নয়। এই মহাবাহু কৃষ্ণ বদরিকাশ্রমে তপস্যা ক’রে মহাদেবকে তুষ্ট করেছিলেন, ইনিই তাঁর নাম ও গুণাবলী কীর্তন করুন।

 ভীষ্মের অনুরোধ শুনে বাসুদেব বললেন, ব্রহ্মা ইন্দ্রাদি দেবগণ এবং মহর্ষিগণও মহাদেবের সকল তত্ত্ব জানেন না, মানুষ কি করে জানবে? আমি তাঁর কথা কিঞ্চিৎ বলছি শুনুন। অনন্তর কৃষ্ণ জলস্পর্শ করে শুচি হয়ে বলতে লাগলেন।—একদা জাম্ববতী আমাকে বললেন, তুমি পূর্বে মহাদেবের আরাধনা করেছিলে, তার ফলে রুক্মিণীর গর্ভে চারুদেষ্ণ সুচারু চারুবেশ যশোধর চারুশ্রবা চারুযশা প্রদ্যুম্ন ও শম্ভু এই আট জন পুত্র জন্মেছে; তাদের তুল্য একটি পুত্র আমাকেও দাও। জাম্ববতীর অনুরোধ শুনে আমি পিতা মাতা, রাজা আহুক[১] ও বলরাম প্রভৃতির অনুমতি নিয়ে গরুড়ের পৃষ্ঠে আরোহণ ক’রে হিমালয় পর্বতে গেলাম। সেখানে মহর্ষি ব্যাঘ্রপাদের পুত্র উপমন্যুর আশ্রমে গিয়ে তাঁকে আমার অভিলাষ জানালে তিনি বললেন, তুমি যাঁকে চাচ্ছ সেই ভগবান মহেশ্বর সপত্নীক এখানেই থাকেন। বাল্যকালে আমি ক্ষীরান্ন খেতে চাইলে জননী আমাকে বলেছিলেন, বৎস, আমরা বনবাসী তাপস, আমাদের গাভী নেই, ক্ষীরান্ন কোথায় পাব? যদি শংকরকে প্রসন্ন করতে পার তবেই তোমার কামনা পূর্ণ হবে। তার পর আমি বহু কাল তপস্যা ক’রে মহাদেবকে তুষ্ট করলাম। তাঁর প্রসাদে আমি অজর অমর সর্বজ্ঞ ও সুদর্শন হয়েছি এবং বন্ধুগণের সহিত অমৃততুল্য ক্ষীরান্ন ভোজন করতে পাচ্ছি। মহাদেব সর্বদা আমার আশ্রমের নিকটে অবস্থান করেন। মাধব, আমি দিব্যনেত্রে

  1. উগ্রসেনের পিতা, অথবা উগ্রসেন।