পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৬৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬০৪
মহাভারত

দেখছি তুমি ছ মাস পরে তাঁর দর্শন পাবে এবং হরপার্বতীর নিকট চব্বিশটি বর লাভ করবে।

 তার পর কৃষ্ণ বললেন, মুনিবর উপমন্যুর ইতিহাস শুনে আমি তাঁর কাছে দীক্ষা নিলাম এবং মস্তকমুণ্ডন ক’রে ঘৃতাক্তদেহে দণ্ড-কুশ-চীর-মেখলা ধারণ ক’রে কঠোর তপস্যা করতে লাগলাম। ছ মাস পরে মহাদেব পার্বতীর সহিত আবির্ভূত হলেন। আমি চরণে পতিত হয়ে স্তব করলে মহাদেব প্রসন্ন হলেন এবং আমার প্রার্থনা শুনে আটটি বর দিলেন—ধর্মে দৃঢ়নিষ্ঠা, যুদ্ধে শত্রুনাশের শক্তি, শ্রেষ্ঠ যশ, পরম বল, যোগসিদ্ধি, লোকপ্রিয়তা, মহাদেবের নৈকট্য, এবং শত শত পুত্র। তার পর জগন্মাতা ভবানীও প্রীত হয়ে আমার প্রার্থনায় আটটি বর দিলেন—দ্বিজগণের প্রতি অক্রোধ, পিতার অনুগ্রহ, শত পুত্র, পরম ভোগ, কুলে প্রীতি, মাতার প্রসাদ, শান্তিলাভ, এবং দক্ষতা। তিনি আমাকে আরও বললেন, তুমি মহাপ্রভাবান্বিত হবে, মিথ্যা বলবে না, তোমার এক হাজার ষোল ভার্যা হবে, তোমার প্রতি তাদের প্রীতি থাকবে, তোমার ধনধান্যাদি অক্ষয় হবে, তুমি বন্ধুদের অতিশয় প্রিয় হবে, তোমার শরীর কমনীয় হবে, এবং তোমার গৃহে প্রত্যহ সাত হাজার অতিথি ভোজন করবে। তার পর আমি উপমন্যুর কাছে ফিরে এসে তাঁকে বরপ্রাপ্তির সংবাদ দিলাম, তিনি প্রীত হয়ে মহাদেবের মাহাত্ম্য এবং স্থির, স্থাণু, প্রভু, প্রবর, বরদ, বর, সর্বাত্মা প্রভৃতি অষ্টোত্তর শত নাম কীর্তন করলেন। হর-পার্বতীর আরাধনা করেই আমি জাম্ববতীর পুত্র শাম্বকে পেয়েছিলাম।

৫। অষ্টাবক্রের পরীক্ষা

 যুধিষ্ঠির বললেন, পিতামহ, পাণিগ্রহণকালে যে ‘সহধর্ম’ বলা হয় তার উদ্দেশ্য কি? পতিপত্নীর এক সঙ্গে ঋষিপ্রোক্ত যজ্ঞাদির অনুষ্ঠান, না প্রজাপতিবিহিত সন্তানোৎপাদন, না অসুরধর্মানুযায়ী কেবল-ইন্দ্রিয়সেবা? ভীষ্ম বললেন, আমি এক প্রাচীন ইতিহাস বলছি শোন।—বদান্য নামক ঋষির কন্যা সুপ্রভার রূপগণে মুগ্ধ হয়ে অষ্টাবক্র তাঁর পাণি প্রার্থনা করেছিলেন। বদান্য বললেন, আমি তোমাকে কন্যা দান করব, কিন্তু প্রথমে তুমি উত্তর দিকে যাত্রা করবে এবং হিমালয় পর্বত ও কুবেরভবন অতিক্রম ক’রে ভগবান রুদ্রের আবাস দেখে এক রমণীয় বনে উপস্থিত হবে। সেখানে এক বৃদ্ধা তপস্বিনী আছেন; তুমি তাঁর সঙ্গে দেখা ক’রে ফিরে এলে আমার কন্যাকে পাবে।