পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৬৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অনুশাসন পর্ব
৬০৫

 অষ্টাবক্র উত্তর দিকে যাত্রা করলেন এবং হিমালয় পার হয়ে এক হ্রদের নিকটে এসে রুদ্র ও রুদ্রাণীর পূজা করলেন। তার পর এক দৈব বৎসর (মানুষের ৩৬০ বৎসর) কুবেরের আতিথ্য ভোগ ক’রে কৈলাস মন্দর ও সুমেরু পর্বত অতিক্রম করলেন এবং রমণীয় বনের মধ্যে একটি দিব্য আশ্রমে উপস্থিত হলেন। সেই আশ্রমে কুবেরালয় অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ একটি কাঞ্চনময় ভবন ছিল। অষ্টাবক্র সেই ভবনের দ্বারে এসে বললেন, আমি অতিথি এসেছি। তখন সাতটি রূপবতী মনোহারিণী কন্যা এসে তাঁকে বললে, ভগবান, ভিতরে আসুন। অষ্টাবক্র মুগ্ধ হয়ে ভবনের অভ্যন্তরে গেলেন এবং দেখলেন সেখানে এক বৃদ্ধা রমণী শুভ্র বসন প’রে সর্বাভরণে ভূষিত হয়ে পর্যঙ্কে ব’সে আছেন। পরস্পর অভিবাদনের পর বৃদ্ধা অষ্টাবক্রকে বললেন, আপনি বসুন। অষ্টাবক্র বললেন, এইসকল নারীদের মধ্যে যিনি জ্ঞানবতী ও শান্তপ্রকৃতি তিনি এখানে থাকুন, আর সকলে নিজ নিজ গৃহে চলে যান। কন্যারা অষ্টাবক্রকে প্রদক্ষিণ ক’রে চ’লে গেল, কেবল বৃদ্ধা রইলেন।

 অষ্টাবক্র শয্যায় শুয়ে বৃদ্ধাকে বললেন, রাত্রি গভীর হয়েছে, তুমিও শোও। বৃদ্ধা অন্য এক শয্যায় শুলেন, কিন্তু কিছু কাল পরে শীতে কাঁপতে কাঁপতে মহর্ষির শয্যায় এসে তাঁকে আলিঙ্গন করলেন। অষ্টাবক্র কাষ্ঠপ্রাচীরের ন্যায় নির্বিকার হয়ে আছেন দেখে বৃদ্ধা দুঃখিত হয়ে বললেন, বিপ্রর্ষি, প্রফুল্ল হও, আমার মনোরথ পূর্ণ কর। তোমার তপস্যা সফল হয়েছে, তুমি আমার এবং এই সমস্ত ধনের প্রভু। অষ্টাবক্র বললেন, আমি পরদারগমন করি না। আমি বিষয়ভোগে অনভিজ্ঞ, ধর্ম পালনের জন্যই সন্তান কামনা করি, পুত্রলাভ হ’লে আমার সদ্‌গতি হবে। তুমি ধর্ম স্মরণ কর, অন্যায় উপরোধ ক’রো না; যদি তোমার অন্য প্রার্থনা কিছু থাকে তো বল। বৃদ্ধা বললেন, তুমি এখানে বাস কর, ক্রমশ দেশ কাল বুঝে মতি স্থির করতে পারবে এবং কৃতকৃত্য হবে। অষ্টাবক্র সম্মত হয়ে সেখানেই রইলেন, কিন্তু সেই বৃদ্ধার জীর্ণ দেহ দেখে তাঁর কিছুমাত্র অনুরাগ হ’ল না। তিনি ভাবতে লাগলেন, ইনিই কি এই গৃহের অধিষ্ঠাত্রী দেবতা, শাপের ফলে বিরূপা হয়েছেন?

 পরদিন বৃদ্ধা অষ্টাবক্রের সর্বদেহে তৈল মর্দন করে তাঁকে সযত্নে স্নান করিয়ে দিলেন এবং অমৃততুল্য স্বাদু অন্ন খেতে দিলেন। রাত্রিকালে তাঁরা পূর্বের ন্যায় পৃথক শয্যায় শলেন এবং অর্ধরাত্রে বৃদ্ধা পুনর্বার মহর্ষির শয্যায় এলেন। মহর্ষি বললেন, পরদারে আমার আসক্তি নেই, তুমি নিজের শয্যায় যাও, তোমার মঙ্গল হ’ক। বৃদ্ধা বললেন, আমি স্বতন্ত্রা, কারও পত্নী নই; যদি অন্য স্ত্রীর সংসর্গে আপত্তি থাকে তবে আমাকে বিবাহ কর। মহর্ষি বললেন, নারীর স্বাতন্ত্র্য কোনও