পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৬৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অনুশাসন পর্ব
৬০৭

আশ্রমে বনে গ্রামে বা নগরে অগ্নিপ্রদান করে—তারা সকলেই ব্রহ্মহত্যাকারীর সমান।

 যুধিষ্ঠির বললেন, কোন্ দেশ জনপদ আশ্রম ও পর্বত শ্রেষ্ঠ গণ্য হয়? কোন্ নদী পুণ্যতমা? ভীষ্ম বললেন, এক সিদ্ধ ব্রাহ্মণ এক শিলবৃত্তি (উঞ্ছবৃত্তি) ব্রাহ্মণকে যা বলেছিলেন শোন।—সেই দেশ জনপদ আশ্রম ও পর্বতই শ্রেষ্ঠ যার মধ্য দিয়ে সরিদ্‌বরা গঙ্গা প্রবাহিত হন। তপস্যা ব্রহ্মচর্য যজ্ঞ ও দানের যে ফল, গঙ্গার আরাধনাতেও সেই ফল। যারা প্রথম বয়সে পাপকর্ম ক’রে পরে গঙ্গার সেবা করে তারাও উত্তম গতি পায়। হংসাদি বহুবিধ বিহঙ্গে সমাকীর্ণ গোষ্ঠসমন্বিত গঙ্গাকে দেখলে লোকে স্বর্গও বিস্মৃত হয়। গঙ্গাদর্শন গঙ্গাজলস্পর্শ ও গঙ্গায় অবগাহন করলে ঊর্ধ্বতন ও অধস্তন সাত পুরুষের সদ্‌গতি হয়।


 যুধিষ্ঠির বললেন, ক্ষত্রিয় বৈশ্য বা শূদ্র কোন উপায়ে ব্রাহ্মণত্ব পেতে পারে? ভীষ্ম বললেন, ব্রাহ্মণ্য অতি দুর্লভ, বহুবার জন্মগ্রহণের পর লোকে ব্রাহ্মণ হ’তে পারে। আমি এক পুরাতন ইতিহাস বলছি শোন। কোনও ব্রাহ্মণের মতঙ্গ নামে একটি গুণবান পুত্র ছিল। একদিন ব্রাহ্মণ তাঁর পুত্রকে যজ্ঞের নিমিত্ত উপকরণ সংগ্রহ ক’রে আনতে বললেন। মতঙ্গ একটি গর্দভযোজিত রথে যাত্রা করলেন, কিন্তু অল্পবয়স্ক গর্দভ নিজের জননীর কাছে রথ নিয়ে চলল। মতঙ্গ রুষ্ট হয়ে গর্দভের নাসিকায় বার বার কষাঘাত করতে লাগলেন। গর্দভ যখন তার মাতার কাছে উপস্থিত হ’ল তখন পুত্রের নাসিকায় ক্ষত দেখে গর্দভী বললে, বৎস, দুঃখিত হ’য়ো না, এক চণ্ডাল তোমাকে চালিত করছে, ব্রাহ্মণ এমন নিষ্ঠুর হয় না। এই পাপী নিজ জাতির স্বভাব পেয়েছ, শিশুর উপর এর দয়া নেই। মতঙ্গ রথ থেকে নেমে গর্দভীকে বললেন, কল্যাণী, আমাকে চণ্ডাল বলছ কেন, আমার মাতা কি ক’রে দূষিত হয়েছেন সত্য বল। গর্দভী বললে, তুমি কামোন্মত্তা ব্রাহ্মণীর গর্ভে শূদ্র নাপিতের ঔরসে জন্মেছ, এজন্য তুমি ব্রাহ্মণ নও, চণ্ডাল।

 মতঙ্গ তখনই গৃহে ফিরে এসে পিতাকে গর্দভীর বাক্য জানালেন এবং ব্রাহ্মণত্ব লাভের উদ্দেশ্যে অরণ্যে তপস্যা করতে গেলেন। তিনি সহস্রাধিক বৎসর কঠোর তপস্যা করলেন। ইন্দ্র বার বার এসে তাঁকে বললেন, তুমি চণ্ডাল হয়ে জন্মেছ, ব্রাহ্মণত্ব পেতে পার না, অন্য বর চাও। অবশেষে মতঙ্গ যখন বুঝলেন যে ব্রাহ্মণত্বলাভ অসম্ভব তখন তিনি ইন্দ্রকে বললেন, আপনার বরে আমি যেন কামচারী কামরূপী বিহঙ্গ হই, ব্রাহ্মণ ক্ষত্রিয় প্রভৃতি সকলেই যেন আমার পূজা করে, আমার