পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৬৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬০৮
মহাভারত

কীর্তি যেন অক্ষয় হয়। ইন্দ্র বললেন, বৎস, তুমি ছন্দোদেব নামে খ্যাত এবং কামিনীগণের পূজনীয় হবে, ত্রিলোকে অতুল কীর্তি লাভ করবে।

৭। দিবোদাসের পুত্র প্রতর্দন—বীতহব্যের ব্রাহ্মণত্বলাভ

 যুধিষ্ঠির বললেন, পিতামহ, শুনেছি রাজা বীতহব্য ক্ষত্রিয় হয়েও বিশ্বামিত্রের ন্যায় ব্রাহ্মণত্ব পেয়েছিলেন। আপনি তাঁর ইতিহাস বলুন। ভীষ্ম বললেন, মনুর পুত্র শর্যাতির বংশে রাজা বৎস জন্মগ্রহণ করেন; বৎসের দুই পুত্র, হৈহয় বা বীতহব্য, এবং তালজঙ্ঘ। বীতহব্যের দশ পত্নীর গর্ভে এক শ বেদজ্ঞ ও অস্ত্রবিশারদ পুত্র জন্মেছিলেন; তাঁরা কাশীরাজ হর্যশ্বকে এবং পরে তাঁর পুত্র সুদেবকে যুদ্ধে বধ করেন। তার পর সুদেবের পুত্র দিবোদাস বারাণসীর রাজা হলেন এবং গঙ্গার উত্তর ও গোমতী নদীর দক্ষিণ তীরে অমরাবতীর ন্যায় সমৃদ্ধ ও সুরক্ষিত রাজধানী স্থাপন করলেন। বীতহব্যের পুত্রগণ আবার আক্রমণ করলে মহারাজ দিবোদাস তাঁদের সঙ্গে সহস্র দিন ঘোর যুদ্ধ করলেন, কিন্তু অবশেষে পরাজিত হয়ে পলায়ন করলেন এবং বৃহস্পতিপুত্র ভরদ্বাজের শরণাপন্ন হলেন। ভরদ্বাজ তাঁকে আশ্বাস দিয়ে এক যজ্ঞ করলেন, তার ফলে দিবোদাসের প্রতর্দন নামে একটি পুত্র হ’ল।

 প্রতর্দন জন্মগ্রহণ ক’রেই ত্রয়োদশবর্ষীয়ের ন্যায় বৃদ্ধি পেতে লাগলেন। তিনি সমস্ত বেদ ও ধনুর্বেদে শিক্ষিত হ’লে ভরদ্বাজ যোগবলে তাঁর দেহে প্রবিষ্ট হয়ে সর্বলোকের তেজ সমাবিষ্ট করলেন। দিবোদাস তাঁর পরাক্রান্ত পুত্রকে দেখে হৃষ্ট হয়ে তাঁকে যৌবরাজ্যে অভিষিক্ত করলেন। তার পর পিতার আজ্ঞায় প্রতর্দন গঙ্গা পার হয়ে বীতহব্যের নগর আক্রমণ করলেন। তাঁর সঙ্গে যুদ্ধ ক’রে বীতহব্যের পুত্রগণ ছিন্নমস্তক হয়ে পতিত হলেন। তখন বীতহব্য পলায়ন ক’রে মহর্ষি ভৃগুর শরণ নিলেন। প্রতর্দন বীতহব্যের অনুসরণ ক’রে ভৃগর আশ্রমে এলেন। যথাবিধি সৎকার ক’রে ভৃগু বললেন, মহারাজ, কি প্রয়োজন বল। প্রতর্দন বললেন, মহর্ষি, এখানে বীতহব্য আশ্রয় নিয়েছেন, আপনি তাঁকে ত্যাগ করুন; তাঁর শত পুত্র আমার পিতৃকুল ও কাশীরাজ্য ধ্বংস করেছে। আমি তাদের বিনষ্ট করেছি, এখন বীতহব্যকে বধ করলেই পিতৃগণের নিকট ঋণমুক্ত হব। ধর্মাত্মা ভৃগু শরণাগত বীতহব্যের প্রতি কৃপাবিষ্ট হয়ে বললেন, এখানে কোনও ক্ষত্রিয় নেই, সকলেই ব্রাহ্মণ। প্রতর্দন হৃষ্ট হয়ে ভৃগুর পাদস্পর্শ ক’রে বললেন, ভগবান, তাই হ’ক, তাতেই আমি কৃতকৃত্য