পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৬৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অনুশাসনপর্ব
৬০৯

হয়েছি, বীর্যবান বীতহব্যকে জাতিত্যাগে বাধ্য করেছি। আপনি প্রসন্ন হয়ে অনুমতি দিন, আমি এখন ফিরে যাই।

 সর্প যেমন বিষ উদ্‌গার করে সেইরূপ বীতহব্যের উদ্দেশে এই কঠোর বাক্য ব’লে প্রতর্দন প্রস্থান করলেন। ভৃগুর বাক্যপ্রভাবে বীতহব্য ব্রহ্মর্ষি ও ব্রহ্মবাদী হয়ে গেলেন। গৃৎসমদ নামে তাঁর এক রূপবান পত্র হয়েছিল, অসুররা তাঁকে ইন্দ্র মনে ক’রে নিপীড়িত করেছিল। ঋগ্‌বেদে গৃৎসমদের কথা আছে। তাঁর অধস্তন দ্বাদশ পুরুষ প্রমতি, তাঁর পুত্র রুরু, যিনি প্রমদ্‌বরাকে বিবাহ করেছিলেন। রুরুর পুত্র শুনক, তাঁর পত্র মহাত্মা শৌনক। ভৃগুর অনুগ্রহে বীতহব্য ও তাঁর বংশধরগণ সকলেই ব্রাহ্মণত্ব লাভ করেছিলেন।

৮। ব্রাহ্মণসেবা—সৎপাত্র ও অসৎপাত্র

 যুধিষ্ঠির বললেন, পিতামহ, রাজাদের পক্ষে কোন, কার্য সর্বাপেক্ষা ফলপ্রদ? ভীষ্ম বললেন, ব্রাহ্মণসেবাই রাজার শ্রেষ্ঠ কার্য। একদিন ইন্দ্র জটাধারী ও ভস্মলিপ্ত হয়ে ছদ্মবেশে অসুররাজ শম্বরের কাছে এসে বললেন, তুমি কিরূপ আচরণের ফলে স্বজাতীয়গণের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হয়েছ? শম্বর বললেন, আমি ব্রাহ্মণদের ঈর্ষা করি না, তাঁদের শাস্ত্রীয় কথা মনোযোগ দিয়ে শুনি, তাঁদের মতেই চলি। আমি ব্রাহ্মণদের নিকট অপরাধী হই না, সর্বদা তাঁদের পূজা করি। মধুমক্ষিকা যেমন চক্রমধ্যে মধুনিষেক করে, তাঁরা সেইরূপ আমাকে সদুপদেশে তৃপ্ত করেন। তাঁরা যা বলেন সমস্তই আমি মেধা দ্বারা গ্রহণ করি। এই কারণেই আমি তারাগণের মধ্যে চন্দ্রের ন্যায় অসুরগণের মধ্যে শ্রেষ্ঠ গণ্য হই।

 যুধিষ্ঠির বললেন, অপরিচিত, দীর্ঘকাল আশ্রিত এবং দূরদেশ হ’তে অভ্যাগত, এই বিবিধ মনুষ্যের মধ্যে কাকে সৎপাত্র মনে করা উচিত? কাকে দান করলে উত্তম ফল হয়? ভীষ্ম বললেন, তুমি যে ত্রিবিধ মনুষ্যের কথা বললে তাঁরা সকলেই সৎপাত্র, তাঁদের কেউ গৃহস্থ, কেউ সন্ন্যাসী। তাঁদের সকলেরই প্রার্থনা পূরণ করা কর্তব্য, কিন্তু ভৃত্যদের পীড়ন ক’রে দান করা অনুচিত। ঋত্বিক পুরোহিত আচার্য শিষ্য কুটুম্ব বান্ধব যদি শাস্ত্রজ্ঞ ও অসূয়াশূন্য হন তবে সকলেই দানের যোগ্য পাত্র। সাবধানে পরীক্ষার পর দান করা উচিত। যাঁর অক্রোধ সত্যনিষ্ঠা অহিংসা তপস্যা সরলতা অনভিমান লজ্জা সহিষ্ণুতা জিতেন্দ্রিয়তা ও মনঃসংযম আছে এবং যিনি অকার্য করেন না তিনিই সম্মানের পাত্র। যে বেদ ও