পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৬৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬১০
মহাভারত

শাস্ত্র মানে না এবং সর্ববিষয়ে নিয়মহীন সে অসৎপাত্র। যে ব্রাহ্মণ পণ্ডিতাভিমানী ও বেদনিন্দক, নিরর্থক তর্কবিদ্যার অনুরক্ত, সভায় হেতুবাদ দ্বারা জয়ী হ’তে চায়, যে কটূভাষী বহুবক্তা ও মূঢ়, তাকে কুক্কুরের ন্যায় অস্পৃশ্য জ্ঞান করা উচিত।

৯। স্ত্রীজাতির কুৎসা—বিপুলের গুরুপত্নীরক্ষা

 যুধিষ্ঠির বললেন, পিতামহ, শোনা যায় স্ত্রীজাতি লঘুচিত্ত এবং সকল দোষের মূল। আপনি তাদের স্বভাব সম্বন্ধে বলুন। ভীষ্ম বললেন, আমি তোমাকে নারদ ও পুংশ্চলী (বেশ্যা) পঞ্চচূড়ার কথা বলছি শোন।—একদিন নারদ বিচরণ করতে করতে ব্রহ্মলোকবাসিনী অপ্সরা পঞ্চচূড়াকে দেখতে পেলেন। নারদ বললেন, সুন্দরী, স্ত্রীজাতির স্বভাব কিপ্রকার তা আমি তোমার কাছে শুনতে ইচ্ছা করি। পঞ্চচূড়া বললেন, আমি স্ত্রী হয়ে স্ত্রীজাতির নিন্দা করতে পারব না, এমন অনুরোধ করা আপনার উচিত নয়। নারদ বললেন, তোমার কথা যথার্থ, কিন্তু মিথ্যা বললেই দোষ হয়, সত্য কথায় দোষ নেই। তখন চারুহাসিনী পঞ্চচূড়া বললেন, দেবর্ষি, নারীদের এই দোষ যে তারা সদ্‌বংশীয়া রূপবতী ও সধবা হ’লেও সদাচার লঙ্ঘন করে। তাদের চেয়ে পাপিষ্ঠ কেউ নেই, তারা সকল দোষের মূল। ধনবান রূপবান ও বশীভূত পতির জন্যও তারা প্রতীক্ষা করতে পারে না, যে পুরুষ কাছে গিয়ে কিঞ্চিৎ চাটুবাক্য বলে তাকেই কামনা করে। উপযাচক পুরুষের অভাবে এবং পরিজনদের ভয়েই নারীরা পতির বশে থাকে। তাদের অগম্য কেউ নেই, পরুষের বয়স বা রূপ তারা বিচার করে না। রূপযৌবনবতী সুবেশা স্বৈরিণীকে দেখলে কুলস্ত্রীরাও সেইরূপ হ’তে ইচ্ছা করে। পুরুষ না পেলে তারা পরস্পরের সাহায্যে কামনা পূরণ করে। সুরূপ পুরুষ দেখলেই তাদের ইন্দ্রিয়বিকার হয়। যম পবন মৃত্যু পাতাল বড়বানল ক্ষুরধারা বিষ সর্প ও অগ্নি—এই সমস্তই একাধারে নারীতে বর্তমান।


 প্রসঙ্গক্রমে ভীষ্ম বললেন, পুরাকালে বিপুল যেপ্রকারে তাঁর গুরু পত্নীকে রক্ষা করেছিলেন তা বলছি শোন।—দেবশর্মা নামে এক ঋষি ছিলেন, তাঁর পত্নীর নাম রুচি। অতুলনীয়া সুন্দরী রুচির উপর ইন্দ্রের লোভ ছিল। দেবশর্মা স্ত্রীচরিত্র ও ইন্দ্রের পরস্ত্রীলালসা জানতেন সেজন্য রুচিকে সাবধানে রক্ষা করতেন। একদিন তিনি তাঁর প্রিয়শিষ্য বিপুলকে বললেন, আমি যজ্ঞ করতে যাচ্ছি, তুমি