পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৬৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬১২
মহাভারত

ক্ষণকাল পরে দেবশর্মা যজ্ঞ সমাপ্ত ক’রে ফিরে এলেন এবং সকল বৃত্তান্ত শুনে প্রীত হয়ে বিপুলকে এই বর দিলেন যে তাঁর ধর্মে একান্ত নিষ্ঠা হবে। তার পর গুরুর অনুমতি নিয়ে বিপুল কঠোর তপস্যায় রত হলেন এবং কীর্তি ও সিদ্ধি লাভ ক’রে স্পর্ধিত হয়ে বিচরণ করতে লাগলেন।

 কিছুকাল পরে অঙ্গরাজ চিত্ররথের পত্নী প্রভাবতী এক মহোৎসবে তাঁর ভগিনী রুচিকে নিমন্ত্রণ করলেন। এই সময়ে আকাশগামিনী এক দিব্যাঙ্গনার অঙ্গ থেকে কতকগুলি পুষ্প ভূপতিত হ’ল। রুচি সেই পুষ্পে তাঁর কেশকলাপ ভূষিত ক’রে ভগিনী প্রভাবতীর নিমন্ত্রণ রক্ষা করলেন। প্রভাবতী রুচিকে বললেন, আমাকে এইরূপ পুষ্প আনিয়ে দাও। দেবশর্মার আদেশে বিপুল সেই ভূপতিত অম্লান পুষ্প সংগ্রহ ক’রে অঙ্গরাজধানী চম্পানগরীতে যাত্রা করলেন। যেতে যেতে তিনি বনমধ্যে দেখলেন, এক নরমিথুন (নরনারী) পরস্পরের হাত ধ’রে ঘুরছে এবং একজন অন্যজনের চেয়ে শীঘ্র চলছে ব’লে কলহ করছে। অবশেষে তারা এই শপথ করলে—আমাদের মধ্যে যে মিথ্যা বলছে সে যেন পরলোকে বিপুলের ন্যায় দুর্গতি পায়। এই কথা শুনে বিপুল চিন্তিত হলেন এবং আরও কিছুদূর গিয়ে দেখলেন, ছ জন লোক স্বর্ণ ও রৌপ্য নির্মিত পাশা নিয়ে খেলছে। তারাও শপথ করলে—আমাদের মধ্যে যে অন্যায় করবে সে যেন বিপুলের গতি পায়। তখন বিপুলের মনে পড়ল, তিনি যে গুরুপত্নীর দেহে প্রবেশ করেছিলেন তা গুরুকে জানান নি। বিপুল পুষ্প নিয়ে চম্পানগরীতে এলে দেবশর্মা বললেন, তুমি পথে যাঁদের দেখেছ তাঁরা তোমার কার্য জানেন, আমি আর রুচিও জানি। সেই মিথুন যাঁরা চক্রবৎ আবর্তন করেন তাঁরা অহোরাত্র, এবং পাশক্রীড়ারত ছয় পুরুষ ছয় ঋতু। এঁরা সকলেই তোমার দুষ্কৃত জানেন। মানুষ নির্জনে দুষ্কর্ম করলেও দিবারাত্র ও ছয় ঋতু তা দেখেন। তুমি রুচিকে রক্ষা ক’রে হৃষ্ট ও গর্বিত হয়েছিলে, কিন্তু ব্যভিচার আশঙ্কা ক’রে আমাকে সব কথা জানাও নি, এই অপরাধ তোমাকে তাঁরা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। তুমি অন্য উপায়ে দুর্বত্তা রুচিকে রক্ষা করতে পারবে না বুঝে তাঁর শরীরে প্রবেশ করেছিলে, কিন্তু তাতে তোমার কোনও পাপ হয় নি। বৎস, আমি প্রীত হয়েছি, তুমি স্বর্গলোক লাভ ক’রে সুখী হবে।

 আখ্যান শেষ ক’রে ভীষ্ম বললেন, যুধিষ্ঠির, স্ত্রীলোককে সর্বদা রক্ষা করা উচিত। সাধ্বী ও অসাধ্বী দুইপ্রকার স্ত্রী আছে, লোকমাতা সাধ্বী স্ত্রীগণ এই পৃথিবী ধারণ করেন। দুশ্চরিত্রা কুলনাশিনী অসাধ্বী স্ত্রীদের গাত্রলক্ষণ দেখলেই