পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৬৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অনুশাসনপর্ব
৬১৩

চেনা যায়, তাদের সাবধানে রক্ষা করতে হয়, নতুবা তারা ব্যভিচারিণী হয় এবং প্রাণহানি করে।

১০। বিবাহভেদ—দুহিতার অধিকার—বর্ণসংকর—পুত্রভেদ

 যুধিষ্ঠির বললেন, পিতামহ, কিরূপ পাত্রে কন্যাদান কর্তব্য? ভীষ্ম বললেন, স্বভাব চরিত্র বিদ্যা কুল ও কার্য দেখে গুণবান পাত্রে কন্যাদান করা উচিত। এইরূপ বিবাহের নাম ব্রাহ্মবিবাহ, ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয়ের পক্ষে এই বিবাহই প্রশস্ত। বরকন্যার পরস্পরের ইচ্ছায় বিবাহকে গান্ধর্ব বলা হয়। ধন দিয়ে কন্যা ক্রয় করে যে বিবাহ হয় তার নাম আসুর। আত্মীয়বর্গকে হত্যা ক’রে রোরুদ্যমানা কন্যার সহিত বিবাহের নাম রাক্ষস। শেষোক্ত দুই বিবাহ নিন্দনীয়। ব্রাহ্মণাদি প্রত্যেক বর্ণের পুরুষ তার সবর্ণের বা নিম্নবর্তী অন্যান্য বর্ণের স্ত্রীকে বিবাহ করতে পারে। ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয়ের পক্ষে সবর্ণা পত্নীই শ্রেষ্ঠ। ত্রিশ বৎসরের পাত্র দশ বৎসরের কন্যাকে এবং একুশ বৎসরের পাত্র সাত বৎসরের কন্যাকে বিবাহ করবে।[১] ঋতুমতী হ’লে কন্যা তিন বৎসর বিবাহের জন্য অপেক্ষা করবে, তার পর সে স্বয়ং পতি অন্বেষণ ক’রে নেবে। মন্ত্রপাঠ ও হোম করে কন্যা সম্প্রদান করলে বিবাহ সিদ্ধ হয়, কেবল বাগ্‌দান করলে বা পণ নিলে হয় না। সপ্তপদীগমনের পর পাণিগ্রহণমন্ত্র সম্পূর্ণ হয়।

 যুধিষ্ঠির বললেন, যদি কন্যা থাকে তবে অপুত্রক ব্যক্তির ধন আর কেউ পেতে পারে কি? ভীষ্ম বললেন, দুহিতা পুত্রের সমান, তার পৈতৃক ধন আর কেউ নিতে পারে না। পুত্র থাক বা না থাক, মাতার যৌতুকধনে কেবল দুহিতারই অধিকার। অপুত্রক ব্যক্তির দৌহিত্রও পুত্রের সমান অধিকারী।

 যুধিষ্ঠির বললেন, আপনি বর্ণসংকরের উৎপত্তি ও কর্মের বিষয় বলুন। ভীষ্ম বললেন, পিতা যদি ব্রাহ্মণ হয়, তবে ব্রাহ্মণীর পুত্র ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়ার পুত্র মূর্ধাভিষিক্ত, বৈশ্যার পুত্র অম্বষ্ঠ, এবং শূদ্রার পুত্র পারশব নামে উক্ত হয়। পিতা যদি ক্ষত্রিয় হয় তবে ক্ষত্রিয়ার পুত্র ক্ষত্রিয়, বৈশ্যার পুত্র মাহিষ্য, এবং শূদ্রার পুত্র উগ্র নামে কথিত হয়। পিতা বৈশ্য হ’লে বৈশ্যার পুত্রকে বৈশ্য এবং শূদ্রার পুত্রকে

  1. ১৬-পরিচ্ছেদে বলা হয়েছে যে বয়স্থা কন্যাকেই বিবাহ করা বিজ্ঞ লোকের উচিত।