পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৬৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬১৪
মহাভারত

করণ বলা হয়। শূদ্র-শূদ্রার পুত্র শূদ্রই হয়। নিম্নবর্ণের পিতা ও উচ্চবর্ণের মাতার সন্তান নিন্দনীয় হয়। ক্ষত্রিয়-ব্রাহ্মণীর পুত্র সূত, তাদের কর্ম রাজাদের স্তুতিপাঠ। বৈশ্য-ব্রাহ্মণীর পুত্র বৈদেহক বা মৌদ্‌গল্য, তাদের কর্ম অন্তঃপুররক্ষা, তাদের উপনয়নাদি সংস্কার নেই। শূদ্র-ব্রাহ্মণীর পুত্র চণ্ডাল, তারা কুলের কলঙ্ক, গ্রামের বহির্দেশে বাস করে এবং ঘাতক (জল্লাদ)এর কর্ম করে। বৈশ্য-ক্ষত্রিয়ার পুত্র বাক্যজীবী বন্দী বা মাগধ। শূদ্র-ক্ষত্রিয়ার পুত্র মৎসজীবী নিষাদ। শূদ্র-বৈশ্যার পত্র আয়োগব (সূত্রধর)। শাস্ত্রে কেবল চতুর্বর্ণের ধর্ম নির্দিষ্ট আছে, বর্ণসংকর জাতির ধর্মের বিধান নেই, তাদের সংখ্যারও ইয়ত্তা নেই।

 তার পর ভীষ্ম বললেন, ঔরসজাত পুত্র আত্মস্বরূপ। পতির অনুমতিতে অন্য কর্তৃক উৎপাদিত সন্তানের নাম নিরুক্তজ, বিনা অনুমতিতে সন্তান হ’লে তার নাম প্রসূতিজ। বিনামূল্যে প্রাপ্ত অপরের পুত্র দত্তকপুত্র, মূল্য দ্বারা প্রাপ্ত কৃতকপত্র। গর্ভবতী স্ত্রীর বিবাহের পর যে পুত্র হয় তার নাম অধ্যোঢ়। অবিবাহিত কুমারীর পুত্র কানীন।

১১। চ্যবন ও নহুষ

 যুধিষ্ঠির ললেন, পিতামহ, যাদের সঙ্গে একত্র বাস করা যায় তাদের উপর কিরূপে স্নেহ হয়? ভীষ্ম বললেন, আমি এক ইতিহাস বলছি শোন।—পুরাকালে ভৃগুবংশজাত মহর্ষি চ্যবন ব্রতধারী হয়ে দ্বাদশ বৎসর গঙ্গাযমুনার জলমধ্যে বাস করেছিলেন। তিনি সর্বভূতের বিশ্বাসভাজন ছিলেন, মৎস্যাদি জলচর নির্ভয়ে তাঁর ওষ্ঠ আঘ্রাণ করত। একদিন ধীবরগণ জাল ফেলে বহু মৎস্য ধরলে, সেই সঙ্গে চ্যবনকেও তারা জালবদ্ধ করে তীরে তুলল। তাঁর পিঙ্গলবর্ণ শ্মশ্রু, মস্তকের জটা এবং শৈবাল-শঙ্খ-শম্বুক-মণ্ডিত দেহ দেখে ধীবরগণ কৃতাঞ্জলিপুটে ভূমিষ্ঠ হয়ে প্রণাম করলে। মৎস্যদের মরণাপন্ন দেখে চ্যবন কৃপাবিষ্ট হয়ে বার বার দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলতে লাগলেন। ধীবরগণ বললে, মহামুনি, আমাদের অজ্ঞানকৃত পাপ ক্ষমা করুন, আদেশ করুন আমরা আপনার কি প্রিয়কার্য করব। চ্যবন বললেন, আমি এই মৎস্যদের সঙ্গে একত্র বাস করেছি, এদের ত্যাগ করতে পারি না; আমি মৎস্যদের সঙ্গেই প্রাণত্যাগ করব বা বিক্রীত হব।

 ধীবরগণ অত্যন্ত ভীত হয়ে রাজা নহুষের কাছে গিয়ে সকল বৃত্তান্ত জানালে। অমাত্য ও পুরোহিতের সঙ্গে নহুষ সত্বর এসে চ্যবনকে বললেন,