পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৬৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অনুশাসন পর্ব
৬১৫

দ্বিজোত্তম, আপনার কি প্রিয়কার্য করব বলুন। চ্যবন বললেন, এই মৎস্যজীবীরা অত্যন্ত শ্রান্ত হয়েছে, তুমি এদের মৎস্যের মূল্য এবং আমারও মূল্য দাও। নহুষ সহস্র মুদ্রা দিতে চাইলে চ্যবন বললেন, আমার মূল্য সহস্র মুদ্রা নয়, তুমি বিবেচনা ক’রে উপযুক্ত মূল্য দাও। নহুষ ক্রমে ক্রমে লক্ষ মুদ্রা, কোটি মুদ্রা, অর্ধ রাজ্য ও সমগ্র রাজ্য দিতে চাইলেন, কিন্তু চ্যবন তাতেও সম্মত হলেন না। নহুষ দুঃখিত ও চিন্তাকুল হলেন। এমন সময়ে এক গোগর্ভজাত ফলমূলাশী তপস্বী এসে নহুষকে বললেন, মহারাজ, ব্রাহ্মণ আর গো অমূল্য, আপনি এই ব্রাহ্মণের মূল্যস্বরূপ একটি গাভী দিন। নহুষ তখন হৃষ্ট হয়ে চ্যবনকে বললেন, ব্রহ্মর্ষি, গাত্রোত্থান করুন, আপনাকে আমি গাভী দ্বারা ক্রয় করলাম। চ্যবন তুষ্ট হয়ে বললেন, এখন তুমি যথার্থই আমাকে ক্রয় করেছ। গোধন তুল্য কোনও ধন নেই; গোমাহাত্ম্য কীর্তন ও শ্রবণ, গোদান এবং গোদর্শন করলে সর্বপাপনাশ ও কল্যাণ হয়। গাভী লক্ষ্মীর মূল এবং স্বর্গের সোপান স্বরূপ। গাভী থেকেই যজ্ঞীয় হবি উৎপন্ন হয়। সমগ্র গোমাহাত্ম্য বলা আমার সাধ্য নয়।

 ধীবরগণ চ্যবনকে বললে, ভগবান, আপনি প্রসন্ন হয়ে এই গাভী গ্রহণ করুন। চ্যবন বললেন, ধীবরগণ, আমি এই গাভী নিলাম, তোমরা পাপমুক্ত হয়ে এই মৎস্যদের সঙ্গে স্বর্গে যাও। তার পর চ্যবন নহুষকে আশীর্বাদ করে নিজ আশ্রমে চ’লে গেলেন।

১২। চ্যবন ও কুশিক

 যুধিষ্ঠির বললেন, পিতামহ, পরশুরাম ব্রহ্মর্ষির বংশে জন্মে ক্ষত্রধর্মা হলেন কেন? আবার, ক্ষত্রিয় কুশিকের বংশে জন্মে বিশ্বামিত্র ব্রাহ্মণ কি ক’রে হলেন? ভীষ্ম বললেন, ভৃগুনন্দন চ্যবন জানতেন যে কুশিকবংশ থেকে তাঁর বংশে ক্ষত্রাচার সংক্রামিত হবে, সেজন্য তিনি কুশিকবংশ দগ্ধ করতে ইচ্ছা করলেন। চ্যবন কুশিকের কাছে গিয়ে বললেন, মহারাজ, আমি তোমার সঙ্গে বাস করতে চাই। কুশিক তাঁকে সসম্মানে গ্রহণ ক’রে বললেন, আমার রাজ্য ধন ধেনু সমস্তই আপনার। চ্যবন বললেন, আমি ওসব চাই না, আমি এক ব্রতের অনুষ্ঠান করব, তুমি ও তোমার মহিষী অকুণ্ঠিত হয়ে আমার পরিচর্যা কর। কুশিক সানন্দে সম্মত হয়ে তাঁকে একটি উত্তম শয়নগৃহে নিয়ে গেলেন। সূর্যাস্ত হ’লে চ্যবন আহারের পর শয্যায় শুয়ে বললেন, তোমরা আমাকে জাগিও না, নিরন্তর পদসেবা কর। কুশিক