পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৬৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬১৬
মহাভারত

ও তাঁর মহিষী আহারনিদ্রা ত্যাগ করে চ্যবনের পদসেবা করতে লাগলেন। একুশ দিন পরে চ্যবন শয্যা থেকে উঠে শয়নগৃহ থেকে নিষ্ক্রান্ত হলেন, কুশিক ও তাঁর মহিষী অত্যন্ত শ্রান্ত ও ক্ষুধার্ত হ’লেও পিছনে পিছনে গেলেন। ক্ষণকাল পরে চ্যবন অন্তর্হিত হলেন।

 সস্ত্রীক কুশিক অন্বেষণ ক’রে কোথাও চ্যবনকে পেলেন না, তখন তাঁরা শয়নগৃহে এসে দেখলেন, মহর্ষি শয্যায় শুয়ে আছেন। কুশিক ও তাঁর মহিষী বিস্মিত হয়ে পুনর্বার পদসেবায় রত হলেন। আরও একুশ দিন পরে চ্যবন উঠে বললেন, আমি স্নান করব, আমার দেহে তৈলমর্দন কর। সপত্নীক কুশিক চ্যবনের দেহে মহামূল্য শতপাক তৈল মর্দন করতে লাগলেন। তার পর চ্যবন স্নানশালায় গিয়ে স্নান ক’রে আবার অন্তর্হিত হলেন। পুনর্বার আবির্ভূত হয়ে তিনি সিংহাসনে বসলেন এবং অন্ন আনবার আদেশ দিলেন। অন্ন মাংস শাক পিষ্টক ফল প্রভৃতি আনা হ’লে চ্যবন তাঁর শয্যা-আসনাদির সঙ্গে সমস্ত ভোজ্যদ্রব্যে অগ্নিদান ক’রে আবার অন্তর্হিত হলেন এবং পরদিন দেখা দিলেন।

 এইরূপে অনেক দিন গেল, চ্যবন কুশিকের কোনও রন্ধ্র (ত্রুটি) দেখতে পেলেন না। একদিন তিনি বললেন, তুমি ও তোমার মহিষী আমাকে রথে বহন ক’রে নিয়ে চল; পথে যারা প্রার্থী হয়ে আসবে তাদের আমি প্রচুর ধনরত্ন দিতে ইচ্ছা করি, তুমি তার আয়োজন কর। রাজা ও মহিষী রথ টানতে লাগলেন, রাজভৃত্যগণ ধনরত্ন নিয়ে পশ্চাতে চলল। চাবনের কষাঘাতে সস্ত্রীক কুশিক ক্ষতবিক্ষত হলেন, পুরবাসিগণ শোকাকুল হয়েও শাপভয়ে নীরব রইল। অজস্র ধন দান করার পর চ্যবন রথ থেকে নেমে বললেন, মহারাজ, তোমাদের উপর আমি প্রীত হয়েছি, বর চাও। এই ব’লে তিনি রাজা ও মহিষীর দেহ হাত দিয়ে স্পর্শ করলেন। কুশিক বললেন, মহর্ষি, আপনার প্রসাদে আমাদের শ্রান্তি ও বেদনা দূর হয়েছে। চ্যবন বললেন, এখন তোমরা গৃহে যাও, আমি কিছুকাল এই গঙ্গাতীরে বাস করব, তোমরা কাল আবার এসো। দুঃখিত হয়ো না, শীঘ্রই তোমাদের সকল কামনা পূর্ণ হবে।

 পরদিন প্রভাতে কুশিক ও তাঁর মহিষী গঙ্গাতীরে এসে দেখলেন, সেখানে গন্ধবনগর তুল্য কাঞ্চনময় প্রাসাদ, রমণীয় পর্বত, পদ্মশোভিত সরোবর, চিত্রশালা, তোরণ, বহুবৃক্ষসমন্বিত উদ্যান প্রভৃতি সৃষ্ট হয়েছে। কুশিক ভাবলেন, আমি কি স্বপ্ন দেখছি, না সশরীরে পরমলোক লাভ করেছি, না উত্তরকুরু বা অমরাবতীতে এসেছি? কিছুকাল পরে সেই কানন প্রাসাদ প্রভৃতি অদৃশ্য হয়ে গেল, গঙ্গাতীর