পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৬৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অনুশাসনপর্ব
৬১৭

পূর্বের ন্যায় নীরব হ’ল। কুশিক তাঁর মহিষীকে বললেন, তপোবলেই এইসকল হ’তে পারে, ত্রিলোকের রাজ্য অপেক্ষা তপস্যা শ্রেষ্ঠ। মহর্ষি চ্যবনেব কি আশ্চর্য শক্তি! ব্রাহ্মণরা সর্ববিষয়ে পবিত্র হয়ে জন্মগ্রহণ করেন; রাজ্য সহজেই পাওয়া যায়, কিন্তু ব্রাহ্মণত্ব অতি দুর্লভ।

 কুশিক ও তাঁর মহিষীকে ডেকে চ্যবন বললেন, মহারাজ, তুমি ইন্দ্রিয় ও মন জয় করেছ, এখন কঠোর পরীক্ষা থেকে মুক্ত হ’লে। আমি প্রীত হয়েছি, বর চাও। কুশিক বললেন, ভৃগুশ্রেষ্ঠ, আপনার নিকটে থেকে অগ্নিমধ্যবর্তী ব্যক্তির ন্যায় আমরা যে দগ্ধ হই নি এই যথেষ্ট। যদি প্রীত হয়ে থাকেন তো বলুন, আপনি যেসকল অদ্ভুত কার্য করেছেন তার উদ্দেশ্য কি? চ্যবন বললেন, মহারাজ, আমি ব্রহ্মার নিকট শুনেছিলাম যে ব্রাহ্মণ-ক্ষত্রিয়ের বিবোধের ফলে কুলসংকর হবে, তোমার এক তেজস্বী বলবান পুত্র জন্মাবে। তোমার বংশ দগ্ধ করবার জন্যই আমি এখানে এসেছিলাম, কিন্তু বহু উৎপীড়ন ক’রেও তোমাকে ক্রুদ্ধ করতে পারি নি, অভিশাপ দেবার কোনও ছিদ্রও পাই নি। তোমাদের প্রীতির জন্যই এই কানন সৃষ্টি করেছিলাম তাতে তোমরা ক্ষণকাল সশরীরে স্বর্গসুখ অনুভব করেছ। বাজা, তুমি ব্রাহ্মণত্ব ও তপশ্চর্যার আকাঙ্ক্ষা করেছ তাও আমি জানি। ব্রাহ্মণত্ব অতি দুর্লভ, ঋষিত্ব ও তপস্বিত্ব আবও দুর্লভ। তথাপি তোমার কামনা সিদ্ধ হবে, তোমার অধস্তন তৃতীয় পুরুষ (বিশ্বামিত্র) ব্রাহ্মণত্ব লাভ করবেন। ক্ষত্রিয়গণ ভৃগুবংশীয়দের যজমান, তথাপি তারা দৈববশে ভৃগু বংশীয়গণকে বধ করবে। তার পর আমাদের ভৃগুবংশে ঊর্ব (ঔর্ব)[১] নামে এক মহাতেজস্বী পুরুষ জন্মাবেন, তাঁর পুত্র ঋচীক সমস্ত ধনুর্বেদ আয়ত্ত করবেন এবং পুত্র জমদগ্নিকে তা দান করবেন। জমদগ্নির সহিত তোমার পুত্র গাধির কন্যার বিবাহ হবে, তাঁদের পুত্র মহাতেজা পরশুরাম[১] ক্ষত্রাচারী হবেন। গাধির পুত্র বিশ্বামিত্র ব্রাহ্মণত্ব লাভ করবেন। এই ভবিষ্যদ্‌বাণী ক’রে চ্যবন তীর্থযাত্রায় গেলেন।

১৩। দানধর্ম—অপালক রাজা—কপিলা—লক্ষ্মী ও গোময়

 যুধিষ্ঠিরের প্রশ্নের উত্তরে ভীষ্ম তপস্যা ও বিবিধ ব্রতাচরণের ফল এবং ধেনু ভূমি জল সুবর্ণ অন্ন মৃগমাংস ঘৃত দুগ্ধ তিল বস্ত্র শয্যা পাদুকা প্রভৃতি

  1. ১.০ ১.১ আদিপর্ব ৩১- এবং বনপর্ব ২৫-পরিচ্ছেদ দ্রষ্টব্য।