পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৬৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অনুশাসন পর্ব
৬১৯

প্রত্যাখ্যান করলে আমি সকলের নিকট অবজ্ঞাত হব, অতএব তোমরা প্রসন্ন হও, আমি তোমাদের শরণাগত। তোমাদের দেহের কোনও স্থান কুৎসিত নয়, আমি তোমাদের অধোদেশেও বাস করতে সম্মত আছি। তখন গাভীরা মন্ত্রণা ক’রে বললে, কল্যাণী যশস্বিনী, তোমার সম্মানরক্ষা আমাদের অবশ্য কর্তব্য; তুমি আমাদের পবিত্র পুরীষ ও মূত্রে অবস্থান কর। লক্ষ্মী তুষ্ট হয়ে বললেন, তোমাদের মঙ্গল হ’ক, আমি সম্মানিত হয়েছি।

১৪। দানের অপাত্র—বশিষ্ঠাদির লোভসংবরণ

 যুধিষ্ঠিরের অনুরোধে ভীষ্ম শ্রাদ্ধকর্মের বিধি সবিস্তারে বর্ণনা ক’রে বললেন, দৈব ও পিতৃকার্যে দানের পূর্বে ব্রাহ্মণদের কুল শীল বিদ্যা ইত্যাদি বিচার করা উচিত। যে ব্রাহ্মণ ধূর্ত ভ্রূণহত্যাকারী যক্ষারোগী পশুপালক বিদ্যাহীন কুসীদজীবী বা রাজভৃত্য, যে পিতার সহিত বিবাদ করে, যার গৃহে উপপতি আছে, যে চোর পারদারিক শূদ্রযাজক বা শস্ত্রজীবী, যে কুকুর নিয়ে মৃগয়া করে, যাকে কুকুর দংশন করেছে, যে জ্যেষ্ঠ ভ্রাতার পূর্বে বিবাহ করেছে, যে কুশীলব (নট) বা কৃষিজীবী, যে কররেখা ও নক্ষত্রাদি দেখে শুভাশুভ নির্ণয় করে, এমন ব্রাহ্মণ অপাঙ্‌ক্তেয়, এদের দান করা উচিত নয়। দানগ্রহণও দোষজনক; যে ব্রাহ্মণ গুণবানের দান গ্রহণ করেন তিনি অল্পদোষী হন, যিনি নির্গুণের দান নেন তিনি পাপে নিমগ্ন হন। আমি এক পুরাতন ইতিহাস বলছি শোন।—

 কশ্যপ অত্রি বশিষ্ঠ ভরদ্বাজ গৌতম বিশ্বামিত্র জমদগ্নি এবং বশিষ্ঠপত্নী অরুন্ধতী ব্রহ্মলোক লাভের নিমিত্ত কঠোর তপস্যা ক’রে পৃথিবী পর্যটন করছিলেন। গণ্ডা নামে এক কিংকরী এবং তার স্বামী পশুসখ নামক শূদ্র ঋষিদের পরিচর্যা করত। এই সময়ে অনাবৃষ্টির ফলে খাদ্যাভাবে লোকে অত্যন্ত দুর্বল হযে গিয়েছিল। শিবিপুত্র শৈব্য-বৃষাদর্ভি এক যজ্ঞ ক’রে ঋত্বিগ্‌গণকে নিজ পুত্র দক্ষিণাস্বরূপ দিয়েছিলেন; সেই পুত্র অকালে প্রাণত্যাগ করলে মহর্ষিগণ নিজের জীবনরক্ষার জন্য তাঁর দেহ স্থালীতে পাক করতে লাগলেন। তা দেখতে পেয়ে শৈব্য বললেন, আপনারা এই অভক্ষ্য বস্তু ত্যাগ করুন, আপনাদের পুষ্টির জন্য যা চান তাই আমি দেব। ঋষিরা বললেন, রাজাদের দান গ্রহণ করলে আপাতত সুখ হয় বটে, কিন্তু পরিণামে তা বিষতুল্য, দানপ্রতিগ্রহের ফলে সমস্ত তপস্যা নষ্ট হয়। যারা